মাদারীপুরে বন্যার পানি কমেছে, দুর্ভোগ কমেনি

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় পদ্মার পানি কিছুটা কমতে শুরু করছে। তবে এখনো পানিবন্দী হাজারও মানুষ। আজ সোমবার দুপুরে পদ্মার চরাঞ্চল চরজানাজাত এলাকা থেকে ছবিটি তোলা। ছবি: প্রথম আলো
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় পদ্মার পানি কিছুটা কমতে শুরু করছে। তবে এখনো পানিবন্দী হাজারও মানুষ। আজ সোমবার দুপুরে পদ্মার চরাঞ্চল চরজানাজাত এলাকা থেকে ছবিটি তোলা। ছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুরের চারটি উপজেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। ফলে জেলায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। তবে নদ-নদীর ভাঙন ও বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। অনেক মানুষ এখনো আশ্রয়কেন্দ্র, উঁচু সড়ক ও সেতুর ওপর অবস্থান করছে।

এদিকে বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এসব এলাকায় স্যানিটেশন ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। দেখা দিয়েছে পানিবাহিত নানা রোগের প্রাদুর্ভাব। নিচু এলাকাগুলোতে নদীভাঙন নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি করেছে। ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলার শিবচর, সদর ও কালকিনি উপজেলার নদীর পাড়ের বাসিন্দারা।
শিবচরের চরজানাজাত এলাকায় পদ্মার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত সাহাবুদ্দিন মাদবর বলেন, ‘নদীর ভাঙনে এবার আমার সব শেষ। এক আনি জমিও আমার আর নাই। অন্যের জমির ওপরে কত দিন থাকতে পারুম জানি না।’
বন্দরখোলা এলাকার সিরাজ মিনা বলেন, ‘দেড় মাস ঘরের মধ্যে বানের পানি ছিল। এখন ঘরের মধ্যে বালু আর মাটিতে ভরা। ঘরের মধ্যে থাকার অবস্থায় নাই। কাম কাইজ নাই, এর মধ্যে ঘরের এই অবস্থা। খুব কষ্টে দিন কাটছে আমাগো।’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলার ৪টি উপজেলার ৫১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ৩৭ হাজার ১০০ পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। ভাঙনে ক্ষতির শিকার হয়েছে প্রায় দেড় লাখ মানুষ। ৪টি উপজেলায় ২৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে মাত্র ১ হাজার ৬৬৭ জন বানভাসি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তাদের চিকিৎসার জন্য সাতটি মেডিকেল বোর্ড চালু রাখা হয়েছে।
মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় আড়িয়াল খাঁ নদীর পানি ৯ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং পদ্মা নদীর পানি মাওয়া পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে সদর, কালকিনি ও রাজৈর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও শিবচর উপজেলায় এখনো বন্যা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি। শিবচরে পদ্মার পানি এখনো বিপৎসীমার ওপরে থাকায় চরাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকার বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, মাঠঘাটে রয়েছে বন্যার পানি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যার পানিতে শিবচর উপজেলার পদ্মা নদীবেষ্টিত চর ও সংলগ্ন ইউনিয়নগুলো এবং সদর উপজেলা, রাজৈর ও কালকিনি উপজেলার নিম্নাঞ্চল এখনো প্লাবিত। ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। নদ-নদীর ভাঙনে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি, কয়েক শ একর ফসলি জমি, রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিলীন হয়েছে বেশ কিছু স্থাপনা।
শিবচরের চরাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে কৃষি ফসলের। অন্যদিকে নদ-নদীতে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে জেলা শহর রক্ষা বাঁধ, শিবচর উপজেলার চরজানাজাত ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শতাধিক বসতঘর, বন্দরখোরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভবন, কমিউনিটি ক্লিনিক, স্কুল ভবনসহ অসংখ্য স্থাপনা।
আজ সোমবার বিকেলে মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম সাহা প্রথম আলোকে বলেন, জেলার নদ-নদীর পানি এখন প্রতিদিনই কমছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতি এখন উন্নতির দিকে। পদ্মার পানি এখন বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আড়িয়াল খাঁ নদীর পানি এখন বিপৎসীমার অনেক নিচে। ফলে বেশির ভাগ এলাকায় বন্যার পানি নেই। তবে নদীভাঙনের প্রবণতা রয়েছে।
পার্থ প্রতীম সাহা আরও বলেন, ‘ভাঙন রোধে আমরা এ পর্যন্ত ৭০ হাজারের বেশি বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলেছি। নদীভাঙন রোধে আমাদের কার্যক্রম চালু আছে। এ ছাড়া আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে নদীভাঙনের মুখে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে আমরা স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছি।’
মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আজাহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বানভাসি মানুষের সহায়তায় নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে বন্যাকবলিত এলাকাগুলোয় মানুষের মধ্যে পানিবাহিত নানা অসুখ দেখা দিয়েছে। আমরা তাদের বিশুদ্ধ পানি ব্যবহারের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।’
আজাহারুল ইসলাম জানান, নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।