পুঠিয়ায় ব্যাটারি পোড়ানোর কারখানার বিষাক্ত ধোয়ায় অতিষ্ঠ গ্রামবাসী

লোকালয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ব্যাটারি পোড়ানোর কারখানা। এর ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ গ্রামের বাসিন্দারা। সম্প্রতি রাজশাহীর পুঠিয়ার ধোপাপাড়া গ্রামে। প্রথম আলো
লোকালয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ব্যাটারি পোড়ানোর কারখানা। এর ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ গ্রামের বাসিন্দারা। সম্প্রতি রাজশাহীর পুঠিয়ার ধোপাপাড়া গ্রামে। প্রথম আলো

রাজশাহীর পুঠিয়ায় ধোপাপাড়া গ্রামের পূর্ব পাশে একটি কারখানা তৈরি করা হয়েছে। টিনের বেড়ায় ঘেরা এই কারখানায় শুধু রাতের বেলায় কাজ করা হয়। প্রথম দিকে মানুষ জানত না সেখানে কী কাজ হয়। সকাল হওয়ার আগেই কারখানার শ্রমিকেরা সবকিছু গুটিয়ে নিয়ে চলে যান। শুধু মাঝরাতে বাতাসে ভেসে আসা ধোঁয়ায় তাঁদের ঘুম ভেঙে যায়।

পুঠিয়া উপজেলার ধোপাপাড়া ও চকপলাশী—এই দুই গ্রামের মানুষ কখনো কখনো সারা রাত ঘুমাতে পারেন না। যেদিন যে গ্রামের দিকে বাতাস যায়, সেদিন সেই গ্রামের মানুষের ঘুম হারাম হয়ে যায়। দুই গ্রামের মধ্যে আছে একটি ব্যাটারির কারখানা। সে কারখানায় ব্যাটারি গলিয়ে সিসা বের করতে যে ধোঁয়া হয়, তাতেই শ্বাস নিতে অস্বস্তি হওয়ায় রাতে ঘুমাতে পারেন না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাটারি গলানোর এমন ধোঁয়া ক্যানসারের উপাদান বহন করে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের সাবেক শিক্ষক জোহা এম এম হোসেন বলেন, ব্যাটারির প্লাস্টিক ও সিসা একসঙ্গে গলছে। তাই এ ধরনের কাজ খুবই সুরক্ষিতভাবে করা উচিত, যাতে এর ধোঁয়া মানুষের সংস্পর্শে না যায়।

কারখানার মালিক আবদুল্লাহর বাড়ি পাবনার নগরবাড়ী এলাকায়। তিনি পুঠিয়া সদরে ভাড়া বাসায় থাকেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে গাড়িতে ব্যবহৃত পুরোনো ব্যাটারি কেনেন। শ্রমিকেরা রাতের বেলায় গাড়িতে করে এই কারখানায় ব্যাটারি নিয়ে এসে গলানোর কাজ করেন। স্থানীয় একটি ইটভাটা থেকে ওই কারখানায় অবৈধভাবে বিদ্যুতের সংযোগ নেওয়া হয়েছে। ভাটার নাম মেসার্স এস এস ব্রিকস।

৩০ জুলাই ধোপাপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের পূর্ব পাশে একটি ধানখেতের একাংশে টিনের বেড়া দিয়ে কারখানাটি তৈরি করা হয়েছে। আশপাশের কয়েকটি বাবলাগাছ ও একটি ইউক্যালিপটাসগাছ মারা গেছে। পাশের জমির ধানও লাল হয়ে গেছে। কথা বলতে বলতে সেখানে ধোপাপাড়া ও চকপলাশী গ্রামের বেশ কয়েকজন কৃষক জড়ো হন। সবার অভিযোগ, রাতে যখন এই কারখানা থেকে ব্যাটারি পোড়ানোর ধোঁয়া বের হয়, তখন তাঁদের দম আটকে আসে।

চকপলাশী গ্রামের কৃষক সাদেক আলী বলেন, রাত ১০টা থেকে ৩টা পর্যন্ত কারখানায় শ্রমিকেরা কাজ করেন। তারপর পিকআপে ভারী মালামাল তুলে নিয়ে আবার চলে যান। কারখানার মালিকের সঙ্গে প্রভাবশালী লোকজন জড়িত। তাই ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে পারেন না।

ধোপাপাড়া গ্রামের রহমান নামের এক কৃষক বছরে ছয় হাজার টাকা ইজারা মূল্যে কারখানা করার জন্য জমি দিয়েছেন। সেখানেই পাওয়া গেল রহমানের ভাতিজা শিহাব উদ্দিনকে। তিনি বলেন, তাঁর চাচা না বুঝে এই জমি দিয়ে এখন বিপদে পড়েছেন। শিহাবের সঙ্গে কারখানার ভেতরে ঢুকে দেখা গেল, মাঝখানে উঠানের মতো খানিকটা জায়গা পাকা করা। তাতে তিনটা গর্ত। গর্তের মুখে সিসা লেগে আছে। চারদিকে ছড়িয়ে আছে পোড়া কয়লা। একটি টিনের বেড়া দেওয়া ঘরে মালামাল রাখা। শিহাব বলছিলেন, ‘পুলিশ এসে কারখানাটি দেখে গেছে, কিন্তু কিছুই বলেনি। ’

কারখানায় যে ইটভাটা থেকে বিদ্যুতের সংযোগ নেওয়া হয়েছে, সেটার মালিক ও স্থানীয় ইউপি সদস্য শামীম শাহ। মুঠোফোনে তিনি জানান, বিদ্যুতের মিটারের জন্য কারখানার মালিক আবেদন করেছেন। এর আগে সাময়িকভাবে ভাটা থেকে সংযোগ নেওয়া হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে কারখানার মালিক আবদুল্লাহ বলেন, ‘যেদিন রাতে বাতাস বয়, সেদিন কাজ করা হয় না।’ কারখানার অনুমোদন আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সামনাসামনি কথা হবে।

কারখানাটির বিষয়ে জানানো হলে জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।