মশিয়ালীতে তিন হত্যা, মূল আসামিরা ধরা না পড়ায় ক্ষোভ

মশিয়ালী হত্যাকাণ্ডের আসামি জাকারিয়া, মিল্টন ও জাফরিন এবং এই বাহিনীর সদস্যদের ফাঁসি দাবি করে এলাকাবাসী মানববন্ধন করেন। খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে, ১৩ আগস্ট। ছবি: প্রথম আলো
মশিয়ালী হত্যাকাণ্ডের আসামি জাকারিয়া, মিল্টন ও জাফরিন এবং এই বাহিনীর সদস্যদের ফাঁসি দাবি করে এলাকাবাসী মানববন্ধন করেন। খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে, ১৩ আগস্ট। ছবি: প্রথম আলো

খুলনার ফুলতলা উপজেলার মশিয়ালী গ্রামে নির্বিচারে গ্রামবাসীর ওপর গুলি চালিয়ে তিনজনকে হত্যার ঘটনার মূল দুই আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। পুলিশ একটু তৎপর হলে ওই আসামিরা ধরা পড়তেন বলে মনে করেন তাঁরা।

বৃহস্পতিবার খুলনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে ওই অভিযোগ করা হয়। মশিয়ালী গ্রামের সাধারণ মানুষ ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া এ ঘটনায় স্থানীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনও করেন।

গ্রামবাসীর পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গুলিতে নিহত নজরুল ইসলামের ভাইয়ের ছেলে মো. মাসুম বিল্লাহ। তিনি বলেন, ঘটনার প্রায় এক মাস পার হয়ে গেলেও মূল আসামিরা রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ কারণে নিহত ও আহত পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি এলাকাবাসীও খুবই চিন্তিত ও হতাশাগ্রস্ত। আবার কোনো এক রাতে ওই ধরনের হামলার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, এরই মধ্যে ওই পরিবারের সদস্যরা সক্রিয় হয়ে গ্রামবাসীকে মামলা দিয়ে হয়রানির পরিকল্পনা করছেন। ইতিমধ্যে গুলি করে হত্যা মামলার মূল আসামি জাকারিয়ার চাচাতো ভাই জুয়েল শেখের স্ত্রী বীথি বাদী হয়ে আদালতে বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের মামলা করেছেন। গত ২৭ জুলাই করা ওই মামলায় এলাকার ৪৬ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও ১৩৫ জনকে আসামি করা হয়। এ ধরনের আরও মামলা করে এলাকাবাসীকে হয়রানি করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, ওই রাতে সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করার পর পুলিশের একটি দল সেখানে হাজির হয়। তারা রাতেই ওই সন্ত্রাসীদের পালিয়ে যেতে সার্বিক সহযোগিতা করে।

আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ওই মামলার প্রধান দুই আসামি জাকারিয়া, মিল্টনসহ অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করা না হলে এলাকাবাসী কঠোর আন্দোলন শুরু করবেন বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়। ওই দাবিতে আগামীকাল শুক্রবার বিকেলে মশিয়ালী গ্রামে বিক্ষোভ মিছিল করবেন এলাকাবাসী।

অভিযোগ ও আসামি গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পর পুলিশের সহযোগিতায় আসামিরা পালিয়ে গেছেন বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সত্য নয়। আসামিরা ধরা না পড়ায় গ্রামবাসী হয়তো ক্ষোভ থেকে এমন অভিযোগ করছেন। খুব শিগগরি প্রধান আসামিসহ অন্য আসামিরা ধরা পড়বেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

মশিয়ালী গ্রামটি ফুলতলার আটরা-গিলেতলা ইউনিয়নের মধ্যে পড়েছে। তবে সেটি কেএমপির খানজাহান আলী থানার আওতাধীন। গত ১৬ জুলাই রাত সাড়ে ৮টার দিকে মশিয়ালী গ্রামের পূর্ব পাড়ার সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি ছোড়েন ওই এলাকার প্রভাবশালী ও আওয়ামী লীগের নেতা শেখ জাকারিয়া, তাঁর মেজ ভাই শেখ মিল্টন ও ছোট ভাই শেখ জাফরিন হাসান। এতে ঘটনাস্থলেই দুজন মারা যান। আর হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরও একজন। ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন আরও ১০ জন। অন্যদিকে ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর গণপিটুনিতে মারা যান জাকারিয়ার চাচাতো ভাই শেখ জিহাদ নামের এক যুবক। এ ছাড়া জাকারিয়ার তিন ভাইয়ের বাড়ি ভাঙচুর করেন গ্রামবাসী।

গুলি করে হত্যার ঘটনায় ১৮ জুলাই নিহত মো. সাইফুল ইসলামের বাবা মো. শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে খানজাহান আলী থানায় ২২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১৫ থেকে ১৬ জনকে আসামি করে মামলা করেন। অন্যদিকে জিহাদকে হত্যার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অপমৃত্যুর মামলা করেছে।

আরও এক আসামি গ্রেপ্তার

মশিয়ালীর ওই ঘটনায় হওয়া মামলার এজাহারভুক্ত ১২ নম্বর আসামি মো. রবিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ভোররাতে নড়াইলের কালিয়া থানার বিলবাইস এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে ওই মামলার সাত আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক এনামুল হক বলেন, দুপুরের দিকে রবিনকে আদালতের কাছে সোপর্দ করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।