করোনা সংকট উত্তরণে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীদের জন্য বিশেষ তহবিল দাবি

এই করোনাকালে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়েছেন দেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীরা। এ সংকট থেকে উত্তরণে তাঁদের জন্য সরকারি বিশেষ আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার দাবি উঠেছে।

আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস-২০২০ উপলক্ষে ‘কোভিড–১৯ মহামারিতে আদিবাসী নারীর জীবনজীবিকা: বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক এক ভার্চ্যুয়াল সভায় এই দাবি উঠেছে। আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ ও বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে সাংসদ আরমা দত্ত বলেন, এই করোনার দুঃসময়ে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীরা কেন ত্রাণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, এই করোনা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে আরও বেশি প্রান্তিকতায় ঠেলে দিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে সঞ্জীব দ্রং বলেন, সরকারি অনুদান থেকে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা যেন বাদ না পড়ে, সে জন্য সরকারকে সচেষ্ট হতে হবে।

বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্যসচিব চঞ্চনা চাকমা আজকের অনুষ্ঠান সঞ্চলনা করেন। বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের ডেপুটি ডিরেক্টর শাহনাজ সুমি এতে সভাপতিত্ব করেন।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফৌজিয়া মোসলেম বলেন, করোনার এই সময় সাধারণ মানুষই স্বাস্থ্যসেবাবঞ্চিত হয়েছে, সেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীরা, বিশেষ করে নারীরা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। এ জন্য সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এই করোনায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীরা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়েছে বলে শাহনাজ সুমি তাঁর স্বাগত বক্তব্যে উল্লেখ করনে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের অধ্যাপক আইনুন নাহার বলেন, এই মহামারির সময় ত্রাণ দেওয়ার কাজে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অংশীদারত্ব ও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এসব জাতিগোষ্ঠীর নারী–পুরুষদের অংশগ্রহণ জরুরি। করোনার সময় যে নারীরা ভূমি দখলের শিকার হয়েছেন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাঁদের জন্য ন্যায়বিচার চান অধ্যাপক নাহার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক জোবাইদা নাসরিন বলেন, অনলাইন শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্রছাত্রীদের জন্য একটু ঝুঁকি থেকে যায়। কেননা, এই এলাকার ছাত্রছাত্রীরা সব সময় নজরদারির মধ্যে থাকে।

টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও আইনজীবী সুস্মিতা চাকমা বলেন, সরকারের যে অনুদান, তা স্বচ্ছতার অভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম এলাকায় সেই ত্রাণ পৌঁছে না। এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে দুর্গমতার কারণে মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

অধিকারকর্মী ফ্লোরা বাবলী তালাং বলেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রথাগত লকডাউনপদ্ধতির কারণে করোনা মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু স্বাস্থ্যসেবা থেকে, বিশেষ করে গর্ভবতী বা প্রসূতি মা বঞ্চিত হয়েছেন বলে তিনি জানান।

অনলাইন আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সমন্বয়কারী ফাল্গুনী ত্রিপুরা। তিনি অতিসত্বর আদিবাসীদের জন্য দ্রুত আর্থিক প্রণোদনা সরকারি ঘোষণার দাবি জানান।