নেত্রকোনায় যুবলীগ নেতাকে নির্যাতন: ওসির পর দুই পুলিশ সদস্যের বদলি

থানায় নিয়ে যুবলীগ নেতা আলম তালুকদারকে নির্যাতনের ঘটনায় নেত্রকোনার দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমানের পর আরও দুই পুলিশ সদস্যকে বদলি করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁদের দুর্গাপুর থানা থেকে সরিয়ে অন্যত্র দায়িত্ব দেওয়া হয়।

পুলিশ সদস্যরা হলেন উপপরিদর্শক (এসআই) হালিম ও কনস্টেবল জুয়েল। তাঁদের মধ্যে জুয়েল ওসি মিজানুর রহমানের বডিগার্ড (দেহরক্ষী) হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। এর আগে গত মঙ্গলবার ওসি মিজানুর রহমানকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়। এরপর আজ তাঁকে সেখান থেকে সরিয়ে বরিশাল রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়। এসআই হালিমকে মদন থানায় এবং কনস্টেবল জুয়েলকে দুর্গম খালিয়াজুরী উপজেলার লেপশিয়া ফাঁড়িতে বদলি করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মুহাম্মদ ফকরুজ্জামান দুই পুলিশ সদস্যের বদলির তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার সন্ধ্যায় বাকলজোড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য ও তিনবারের সাবেক সাংসদ প্রয়াত জালাল উদ্দিন তালুকদারের ভাতিজা আলম তালুকদার পৌর শহরের এমপির মোড় এলাকায় সড়কের পাশে অবস্থান করছিলেন। এ সময় আব্দুল কাইয়ুম নামে স্থানীয় ছাত্রদলের এক কর্মীসহ তিনজন একটি মোটরসাইকেলে করে দেশি অস্ত্র নিয়ে যাচ্ছিলেন। বিষয়টি দেখে আলম তালুকদার কাইয়ুমকে মোটরসাইকেল থামাতে বলেন। কিন্তু কাইয়ুম চলে যেতে চাইলে আলম তালুকদার ও তাঁর সঙ্গে থাকা কয়েকজন দৌড়ে গিয়ে কাচারি মোড় এলাকায় কাইয়ুমকে আটক করেন। এ সময় কাইয়ুমের সঙ্গে থাকা দুই সহযোগী দৌড়ে পালিয়ে যান। পরে আলম তালুকদার পাশে একটি ঘরে নিয়ে কাইয়ুমকে জিজ্ঞাসাবাদসহ মারধর করেন। একই সঙ্গে পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ এসে আলম ও কাইয়ুমসহ চারজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

থানায় নেওয়ার পর ওসি মিজানসহ কয়েকজন পুলিশ গভীর রাতে আলম তালুকদারকে অমানুষিক নির্যাতন করেন। এতে আলম অচেতন ও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে পুলিশ সদস্যরা তাঁকে দ্রুত দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাতেই তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। পরদিন সকালে ওসি কাইয়ুমকে বাদী করে থানায় একটি মামলা করান। এরপর ওই মামলায় অসুস্থ আলমকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে হাসপাতাল থেকে নিয়ে এসে দুর্গাপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। কিন্তু আদালতের নির্দেশে আলম জামিন পান। বর্তমানে আলম দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুন্সী জানান, ওসি মিজানের কিছু কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তার যে ধরনের আচরণ থাকার প্রয়োজন, মিজান সেখানে তা করেননি। মিজানকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে যুক্ত করা হয়। এরপর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় আজ মিজানকে বরিশাল রেঞ্জে যুক্ত করা হয়।