শেরপুরে বন্যার পানি কমছে, বিধ্বস্ত সড়কগুলোতে চলাচল বন্ধ

শেরপুরে বন্যার পানির প্রবল স্রোতে বিধ্বস্ত শিমুলতলী এলাকার কজওয়ে। ছবি: দেবাশীষ সাহা রায়
শেরপুরে বন্যার পানির প্রবল স্রোতে বিধ্বস্ত শিমুলতলী এলাকার কজওয়ে। ছবি: দেবাশীষ সাহা রায়

শেরপুরে বন্যার পানি কমে গেলেও এক মাস ধরে শেরপুর-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে বিকল্প পথে চলছে যাত্রীরা। বিকল্প পথে চলছে ভারী যানবাহনও। এতে দুভোর্গের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাড়তি ভাড়া।

পোড়ারদোকান ও শিমুলতলী এলাকায় দুটি ‘কজওয়ের’ ওপর দিয়ে প্রবল বেগে বন্যার পানি প্রবাহিত হওয়ার ফলে গত ১৮ জুলাই থেকে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ), শেরপুর ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, শেরপুর থেকে সড়কপথে জামালপুরের দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার। স্বাভাবিক সময়ে মাত্র আধঘণ্টায় যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন শেরপুর-জামালপুর সড়কে যাতায়াত করে থাকে। কিন্তু ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট বন্যার পানি পোড়ারদোকান ও শিমুলতলী এলাকার দুটি ‘কজওয়ের’ ওপর দিয়ে ৬ থেকে ৭ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হওয়ায় সড়কের পাশে নবনির্মিত দুটি বেইলি সেতু বিধ্বস্ত হয়। ফলে গত ১৮ জুলাই থেকে এই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

বন্যার সময় পোড়ারদোকান এলাকা থেকে যাত্রীরা নৌকায় চড়ে চরম দুর্ভোগ ও ঝুঁকির মধ্য দিয়ে জামালপুরে যাতায়াত করেছে। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নিয়ন্ত্রণাধীন শেরপুর-কুসুমহাটি-জামালপুর বিকল্প সড়কপথে হালকা যানবাহনে করে যাত্রীরা চলাচল করছে। এতে জামালপুর যেতে যাত্রীদের বাড়তি সময় লাগছে। আর গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। সেই সঙ্গে উত্তরবঙ্গ ও টাঙ্গাইল থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাকগুলো ১০০ কিলোমিটার ঘুরে ময়মনসিংহ হয়ে শেরপুরে আসছে। এতে পণ্যবাহী ট্রাকের ভাড়াও বৃদ্ধি পেয়েছে।

শেরপুরে বন্যার পানির প্রবল স্রোতে বিধ্বস্ত শিমুলতলী এলাকার কজওয়ের পাশে নির্মিত বেইলি সেতু। ছবি: দেবাশীষ সাহা রায়
শেরপুরে বন্যার পানির প্রবল স্রোতে বিধ্বস্ত শিমুলতলী এলাকার কজওয়ের পাশে নির্মিত বেইলি সেতু। ছবি: দেবাশীষ সাহা রায়

আজ শনিবার সকালে সরেজমিনে পোড়ারদোকান ও শিমুলতলী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বন্যার পানির প্রবল স্রোতে কজওয়ে দুটির সড়কের মধ্যবর্তীস্থান ভেঙে গেছে। ভেঙে যাওয়া অংশে এখনো পানি আছে। সেই সঙ্গে কজওয়ের পাশে নির্মিত বেইলি সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙে গিয়ে সেতু দুটি বিধ্বস্ত হয়েছে। সংযোগ সড়ক ও বেইলি সেতু মেরামত না করা পর্যন্ত এই সড়কে পুনরায় যানবাহন চলাচল সম্ভব হবে না।

শেরপুর শহরের মো. আলী হোসেন জামালপুরের একটি ব্যাংকে চাকরি করেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘বন্যার আগে শেরপুর-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যাতায়াত করতাম। এতে প্রতিদিন ভাড়া লাগত ১০০ টাকা। কিন্তু এখন বিকল্প সড়ক দিয়ে জামালপুরে যাতায়াত করছি। ভাড়া লাগছে ১৫০ টাকা। বিকল্প সড়কটি ভাঙাচোরা, সংকীর্ণ ও ঝুকিপূর্ণ। ফলে সময় বেশি লাগছে।’

শেরপুর শহরের নয়আনি বাজারের পাইকারি সবজি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সোহাগ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী নূর হোসেন ফকির প্রথম আলোকে বলেন, বন্যার আগে উত্তরবঙ্গ থেকে জামালপুর হয়ে শেরপুর আসা পণ্যবাহী ট্রাকের ভাড়া ছিল ১৮ হাজার টাকা। কিন্তু এখন শেরপুর-জামালপুর সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় ট্রাকগুলো ময়মনসিংহ হয়ে শেরপুরে আসছে। এ জন্য ভাড়া দিতে হচ্ছে ২২ হাজার টাকা। এতে পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে এবং পণ্যের দামও বেশি পড়ছে।

সওজ সূত্রে জানা গেছে, পোড়ারদোকান ও শিমুলতলী এলাকায় কজওয়ের ওপর দুটি সেতুর অভাবে বর্ষাকালে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে এ সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন শেরপুর ও জামালপুরবাসী চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে পড়ে। এ দুর্ভোগ নিরসনকল্পে সওজ সড়কের পোড়ারদোকান ও শিমুলতলী এলাকায় ১২৫ দশমিক ৪৯৭ মিটার দীর্ঘ দুটি সেতু নির্মাণ করছে। সেতু দুটির প্রাক্কলিত ব্যয় প্রায় ৪০ কোটি টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড সেতু দুটির নির্মাণকাজ করছে। এই প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত বেইলি সেতু দুটি মেরামত করবে বলে সওজ সূত্র জানায়।

শেরপুরে বন্যার পানির প্রবল স্রোতে বিধ্বস্ত পোড়ারদোকান এলাকার কজওয়ের পাশে নির্মিত বেইলি সেতু। ছবি: দেবাশীষ সাহা রায়
শেরপুরে বন্যার পানির প্রবল স্রোতে বিধ্বস্ত পোড়ারদোকান এলাকার কজওয়ের পাশে নির্মিত বেইলি সেতু। ছবি: দেবাশীষ সাহা রায়

শেরপুর-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও এলাকাবাসী বেইলি সেতু দুটি দ্রুত মেরামত করে সড়কগুলো চলাচলের উপযোগী করার আহ্বান জানিয়েছেন।

সওজ, শেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মো. শরীফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বেইলি সেতু দুটি দ্রুত মেরামতের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশা করা যায়, শিগগিরই কাজ শুরু হবে।