কোয়ারেন্টিনে আমার দিনগুলো

>রোনাভাইরাস পাল্টে দিয়েছে আমাদের জীবনের বাস্তবতা। দেশ-বিদেশের পাঠকেরা এখানে লিখছেন তাঁদের এ সময়ের আনন্দ-বেদনাভরা দিনযাপনের মানবিক কাহিনি। আপনিও লিখুন। পাঠকের আরও লেখা দেখুন প্রথম আলো অনলাইনে। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]

একটা সময় আমি অনেক

মজা করে দিন কাটাতাম….

তারপর করোনা এল

বর্তমানে আমরা পার করছি এক কঠিন সময়। চারদিকে চলছে মৃত্যুর মিছিল। পুরো বিশ্বই এখন করোনাভাইরাসের কাছে অসহায়। এই ভাইরাসের কারণে থমকে গেছে গোটা বিশ্ব। লকডাউন হয়েছে, সবাইকে নাকি থাকতে হবে কোয়ারেন্টিনে। এই কোয়ারেন্টিন কখনো ভালো লাগে, কখনো খুবই বিরক্তিকর।

আগেই বলে নিই, আমি ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রী। ঢাকায় দাদু, ছোট আব্বুর সঙ্গে থাকি এবং পড়াশোনা করি। কিন্তু আমার মা-বাবা ও বোন কক্সবাজারে থাকে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে মার্চে স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। তখন আমি কক্সবাজার চলে আসি। ভেবেছিলাম, এক সপ্তাহ কিংবা ১০-১২ দিনের মধ্যে আবার স্কুলে পড়াশোনা শুরু হবে।

পরবর্তী সময়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার পুরো দেশ লকডাউন ঘোষণা করে। এতে সবার কোয়ারেন্টিন জীবনযাপন শুরু হয়। প্রথমদিকে সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে চলতে থাকে। কেননা ব্যস্ত জীবনের প্রভাব কিছুটা রয়ে যায় তখনো। যত দিন যায়, স্কুল-কলেজসহ সব প্রতিষ্ঠানের ছুটিও বাড়তে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে মানুষের কোয়ারেন্টিন জীবনযাপনও বাড়তে থাকে। কিন্তু যত ছুটি বাড়তে থাকে, প্রতিদিনের নিয়মকানুনও বদলে যেতে থাকে। সবকিছু অনিয়ম হয়ে যায়। পড়াশোনা তো খুবই কম হয়। প্রথমদিকে স্বাভাবিক নিয়মে সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা হতো। কিন্তু ধীরে ধীরে অনেক রাত পর্যন্ত জাগার কারণে অনেক বেলা করে ঘুম থেকে ওঠা হয়। খাওয়া-দাওয়াও ঘুমের সঙ্গে অনিয়ম হয়ে গেছে। পড়াশোনাও খুব একটা হয় না। সপ্তাহে কয়েকটা অনলাইনে ক্লাস ছাড়া তেমন পড়াশোনা হয় না। সারা দিন ফোন-টিভি এসব নিয়ে ব্যস্ততা থাকে। অর্থাৎ সবকিছুই অনিয়ম। তবে এখন আমরা চেষ্টা করছি নির্দিষ্ট রুটিন অনুযায়ী চলতে। স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে।

কোয়ারেন্টিনে আমি আম্মুকে সাহায্য করার চেষ্টা করি যতটুকু পারি। নিয়মিত গরম পানি বা চা পান করি। স্বাস্থ্যবিধি অনুসারে হাত ধুই। এ ছাড়া লেখালেখি করি, ড্রয়িং করি, ইউটিউবে শিক্ষণীয় ভিডিও দেখি। তবে এ পর্যন্ত একবারও ঘর থেকে বের হইনি। তাই ঘর থেকে বাইরে কোথাও ঘুরে আসতে খুব ইচ্ছা করে।

এই লকডাউনে আমি স্কুলের বন্ধুদের খুব মিস করছি। স্কুলে যাওয়া-আসা, পড়াশোনা, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া, একসঙ্গে টিফিন করা—অর্থাৎ সবকিছুকেই খুব মিস করছি। অনেক দিন হয় স্কুলে যাওয়া হয় না। সেই স্কুলদিনের কথা মনে করলে কেমন যেন লাগে। তবে একটাই কষ্ট, আমার স্কুল লাইফের শেষ বছরে কেন এমন হলো?

আমার কোয়ারেন্টিন মাঝেমধ্যে ভালোই লাগে। কোনো পড়াশোনার ব্যস্ততা নেই। কোনো বাইরে যাওয়া নেই। তবে মাঝেমধ্যে খুবই বিরক্ত লাগে। তখন আমরা তিন বোন মিলে অনেক মজার মজার গল্প করি, খেলাধুলা করি। তখন আর খারাপ লাগে না।

একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। থামবে এই মৃত্যুর মিছিল। আমরা আমাদের পুরোনো এবং সুস্থ পরিবেশ ফিরে পাব। ফিরে যাব স্কুলে। দেখা হবে সবার সঙ্গে, বন্ধুদের সঙ্গে ইনশা আল্লাহ।