কালোবাজারি বন্ধের আশা, থাকবে ভোগান্তিও

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

টিকিটের কালোবাজারি ঠেকাতে রেলের নতুন উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও ভোগান্তিও পোহাতে হবে কিছু যাত্রীকে। অ্যাপ ও অনলাইন ব্যবহারে অভ্যস্ত নয় এমন যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়তে পারেন। এই শ্রেণির যাত্রীদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় নতুন উদ্যোগ আবার প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। 

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ট্রেন ভ্রমণে কেনা টিকিট, রিটার্ন টিকিট ও নির্দিষ্ট মেয়াদি টিকিট হস্তান্তরযোগ্য নয় বলে গত বৃহস্পতিবার ঘোষণা দিয়েছে। যে ব্যক্তি বা যাত্রী টিকিট কিনবে শুধু তিনি ট্রেন ভ্রমণ করতে পারবেন। নিজে টিকিট কিনে অন্য কোনো যাত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হলে বিক্রেতা তিন মাস কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আর ক্রেতা ওই টিকিট নিয়ে ভ্রমণ করলে একক ভ্রমণের সমান অতিরিক্ত ভাড়ায় দণ্ডিত হবে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে নিজে টিকিট কেটে রেল ভ্রমণ ও অন্যের নামে কেনা টিকিটে রেল ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানিয়েছে রেলওয়ে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেলের এমন সিদ্ধান্তে কালোবাজারিরা নিরুৎসাহিত হবে। ভ্রমণকারী যাত্রী নিজের টিকিট নিজে কিনবেন। এ জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র সার্বক্ষণিক ব্যবহার করবেন তিনি। আন্তনগর ট্রেনের টিকিটে যাত্রীর নাম উল্লেখ থাকবে। ভ্রমণ করার সময় যাত্রীকে নিজ পরিচয়পত্র রাখতে হবে। চলন্ত ট্রেনে টিকিটের সঙ্গে পরিচয়পত্র মিলিয়ে নেবেন কর্তব্যরত টিটিই বা ট্রেন টিকিট এক্সামিনার।
নতুন সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অর্থনীতিবিদ মইনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী জড়িত। কালোবাজারিদের সঙ্গে তাঁদের যোগসাজশের কথা আমরা নানা সময় শুনতে পাই। তাঁদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির খবর আমরা তেমন পাই না। এটা ঠেকাতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ভালো দিক আছে।

বাংলাদেশে অনলাইন বা ই-টিকিট পদ্ধতি চালু হয় ২০১২ সালের ২৯ মে থেকে। শুরুর দিকে ২৫ শতাংশ টিকিট অনলাইনে এবং ৭৫ শতাংশ বিক্রি হতো কাউন্টারে। ২০১৯ সালের রোজার ঈদের আগে অনলাইন বা অ্যাপে টিকিট বিক্রি ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশে উন্নীত করা হয়। কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম বা সিএনএস নামের একটি কোম্পানি অনলাইন বা অ্যাপ সেবা দিচ্ছে রেলওয়েকে। গত বছর ঈদের আগে ৫০ শতাংশ টিকিট অনলাইনে বিক্রি সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়। এতে সিএনএস কোম্পানির সফটওয়ারের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কারণ, ওই সময় যাত্রীরা কোনোভাবে এই অ্যাপে প্রবেশ করতে পারছিলেন না।

এদিকে করোনাকালে কিছুদিন সব যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। গত ৩১ মে থেকে সীমিত আকারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রীবাহী ট্রেন আবার চালু করা হয়। ওই সময় থেকে শতভাগ টিকিট অনলাইন বা অ্যাপে বিক্রি হচ্ছে, যা এখনো বলবৎ আছে।
নতুন সিদ্ধান্ত সম্পর্কে রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. শামছুজ্জামান বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির ওপর আমাদের সরকার জোর দিচ্ছে। এ জন্য টিকিট যার, ভ্রমণ তার আমরা নিশ্চিত করতে চাচ্ছি।

কালোবাজারির উদাহরণ টেনে মো. শামছুজ্জামান বলেন, কাউন্টার থেকে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে অসংখ্য টিকিট তুলে নেওয়া হতো। এগুলো চারগুণ বেশি দামে যাত্রীদের কাছে বিক্রি হতো। নতুন নিয়মে একটি আইডি দিয়ে সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কেনা যাবে। এতে কালোবাজারি ঠেকে যাবে।

করোনাকালে সীমিত পরিসরে সারা দেশে এখন ১৭ জোড়া ট্রেন চলছে। ১৬ আগস্ট রোববার আরও ১২ জোড়া নতুন ট্রেন চালু হবে। এ ক্ষেত্রে ট্রেনের টিকিট নিয়ে মানুষের অসন্তোষ দূর হবে বলে মনে করছেন তাঁরা। ৩১ আগস্টের মধ্যে বন্ধ থাকা বাকি ট্রেনগুলো চালু হতে পারে।

ভোগান্তিও থাকবে

নতুন নিয়মে ট্রেনের টিকিটের কালোবাজারি পুরোপুরি অবসান হবে বলে যাত্রী এবং রেলওয়ের কর্মীরা মনে করছেন। রেলের এই সিদ্ধান্ত অনেকাংশে যৌক্তিক মনে করা হচ্ছে। কিন্তু দেশের একটি শ্রেণির মানুষ অনলাইন বা অ্যাপ ব্যবহারে অভ্যস্ত নন। তাঁদের জন্য নতুন সিদ্ধান্ত ভোগান্তি বাড়াবে।
অর্থনীতিবিদ মইনুল হোসেন এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা অ্যাপ বা অনলাইনে টিকিট করতে পারবেন না তাঁদের জন্য বিকল্পপন্থা কী তা স্পষ্ট করেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এতে কিছু মানুষের ভোগান্তি বাড়তে পারে। তাঁদের জন্য ভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া উচিত।
আরও দু-একজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অ্যাপ ও অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরুর পর টিকিট পাওয়ার ভোগান্তি-বিড়ম্বনা কমবে, কালোবাজারি বন্ধ হবে বলে আশা করা হয়েছিল। কালোবাজারিদের উৎপাত বন্ধ হয়নি। বরং কালোবাজারে টিকিটের দাম উল্টো বেড়ে যায়। নতুন নিয়মে কালোবাজারি ঠেকে যাবে। তথ্যপ্রযুক্তিতে অভ্যস্ত নন এমন বয়স্ক লোকজন টিকিট পাবেন না। তাঁদের জন্য বিকল্প ভাবা উচিত ছিল।
রেলের মহাপরিচালক মো. শামছুজ্জামান মনে করেন, এ ধরনের ভোগান্তি সর্বোচ্চ তিন মাস থাকবে। মানুষ ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। আর যাদের স্মার্ট ফোন নেই তাঁরা প্রতিবেশী বা বন্ধুর ফোন ব্যবহার করে অনলাইন টিকিট কিনতে পারবেন।