ধলাই নদে নৌ চাঁদাবাজকে কারাদণ্ড

ধলাই নদে টাস্কফোর্স অভিযান চালিয়ে এভাবেই চাঁদাবাজির বাহন নৌকা ডুবিয়ে দেয়। বুধবারী বাজার এলাকা, ধলাই নদ, ১৭ আগস্ট দুপুর।প্রথম আলো

সীমান্ত থেকে নেমে আসা সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদ দিয়ে চলাচলকারী নৌযানগুলোতে চাঁদা তুলছিল একটি চক্র। ইঞ্চিনচালিত নৌকা দিয়ে নদের মাঝখানে গিয়ে চাঁদাবাজেরা চাঁদা তুলত। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য ও পুলিশ নিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার নৌপথ ধাওয়া করে হাতেনাতে এক চাঁদাবাজ ধরে চাঁদাবাজি করার দুটো নৌকা ধলাই নদে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ধরা পড়া চাঁদাবাজকে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আজ সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ধলাই নদে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন আচার্যের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স এ অভিযান চালায়।

সীমান্তের ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল লুংলংপুঞ্জি ও শিলংয়ের চেরাপুঞ্জির একটি পাহাড়ি ঝরনা থেকে ধলাই নদ সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা দিয়ে প্রবাহমান। বর্ষার সময় নদে পানি বাড়ায় নানা রকম নৌযান চলাচল করে। এসব নৌযান থেকে মাঝনদীতে গিয়ে চাঁদাবাজি করে একটি চক্র। ইঞ্চিনচালিত ছোট ছোট নৌকায় করে চাঁদাবাজেরা ধলাই নদের মাঝখানে গিয়ে চাঁদাবাজি করে বলে এঁদের ধরা সম্ভব হয় না।

উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ সূত্র জানায়, ধলাই নদের উত্তর ও দক্ষিণ ভাগ এলাকা বালুমহাল। এর মধ্যে উত্তর ভাগ এবার ইজারা দেওয়া হয়। কিন্তু দক্ষিণ এলাকায় একদল বালুর কারবারি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় ইউএনওর নেতৃত্বে টাস্কফোর্সের অভিযান হয়। এতে মো. সমুজ আলী নামের একজন বালুর কারবারিকে ধরে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ওই অভিযানে ধলাই নদের বুধবারী বাজার এলাকার কাছে কয়েকটি নৌকা দিয়ে চাঁদাবাজি চলছিল। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত প্রায় আধা ঘণ্টা ধাওয়া করে আবদুল করিম নামের একজন চাঁদাবাজকে হাতেনাতে আটক করা হয়। চাঁদাবাজ ধরার পর ব্যবহৃত দুটো নৌকা মাঝনদীতে ডুবিয়ে বিনষ্ট করা হয়। চাঁদাবাজির সময় আটক আবদুল করিমের বাড়ি কোম্পানীগঞ্জের ঢালারপাড় এলাকায়। বিকেলে ইউএনও পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাঁকে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ধলাই নদে টাস্কফোর্সের অভিযান থেকে নৌপথে ধাওয়া করে হাতেনাতে চাঁদাবাজ আটকের ঘটনাটি প্রথম বলে জানিয়েছেন ইউএনও সুমন আচার্য। তিনি বলেন, ধলাই নদের মাঝখানে নৌকা নিয়ে চাঁদাবাজি হওয়ায় চাঁদাবাজদের ধরতে গেলে পালিয়ে যায়। অবৈধ বালু উত্তোলন ঠেকাতে টাস্কফোর্সের অভিযান চালানোর সময় চারটি নৌকা নিয়ে কয়েকজন চাঁদাবাজি করার সময় ধাওয়া করে একজনকে ধরা হয়। এ রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দণ্ড দেওয়া হয়। টাস্কফোর্সের অভিযান–সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ধলাই নদ গোয়াইনঘাটের পিয়াইন নদ, সিলেটের চেঙ্গেরখাল, ইছাকলস হয়ে সুনামগঞ্জের ছাতকে সুরমা নদীতে মিলিত হয়েছে। বর্ষাকালে বালু ও পাথরবাহী নৌযান থেকে নৌপথের একাধিক স্থানে চাঁদাবাজি হয়।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম নজরুল জানিয়েছেন, ধলাই নদের কোম্পানীগঞ্জ থানার অধীন স্থানগুলো চিহ্নিত করে চাঁদাবাজি বন্ধে পুলিশ তৎপর রয়েছে। দণ্ডিত চাঁদাবাজের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে প্রয়োজনে মামলা করে পলাতক চাঁদাবাজদের ধরার চেষ্টা করা হবে।