খুলনা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে শুধু নেই আর নেই

মাঝারি আকারের একটি ঘর। এক কোনায় একটি শয্যায় গোঙাচ্ছিলেন আপাদমস্তক ব্যান্ডেজে মোড়া নড়াইল থেকে আসা অগ্নিদগ্ধ এক রোগী। ঘরের সব কটি শয্যাই আগুনে পোড়া নারী-পুরুষ রোগীতে ভর্তি। দুই রোগীর স্থান হয়েছে মেঝেতে।
চতুর্থ তলার এ ঘরটি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট। গত ২৪ ডিসেম্বর চালু হওয়ার পর ইতিমধ্যে ১০ শয্যা বেড়ে ১৫টি হয়েছে। কিন্তু প্রতিদিন খুলনা বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রোগী আসছেন গড়ে প্রায় ৩০ জন। সবার জন্য শয্যা নেই, এমনকি স্থানও নেই। নেই নারী-পুরুষের আড়াল। চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা কম, যন্ত্রপাতির টানাটানি আছে। অস্ত্রোপচারের নেই কোনো কক্ষ।
চিকিৎসক এখন আছেন তিনজন। নার্স আছেন সাতজন, সবাই নারী। রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন কর্তব্যরত চার নার্স। একজন বললেন, প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুরুষ ও নারী নার্স থাকার কথা ছিল। এখন অন্য বিভাগ থেকে ধার করে চুক্তিতে নার্স আনতে হচ্ছে।
পরিচ্ছন্নতা ও অন্যান্য কাজে সাহায্য করার জন্য চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর পদ আছে একটি, সেটিও শূন্য। ওয়ার্ড পরিষ্কার রাখা নির্ভর করছে অন্য ওয়ার্ড থেকে ডেকে আনা লোকজনের ওপর।
এ ইউনিটের প্রধান তরিকুল ইসলাম বলেন, স্থান, জনবল ও যন্ত্রপাতির অভাব তাঁদের প্রধান সমস্যা। রোগীর ট্রলি ঠেলা, ঘর সাফাই—এসব কাজ খুচরা মজুরিতে করানোর মতো লোক সব সময় মেলে না। তাঁদের কাজও সন্তোষজনক নয়। তা ছাড়া কিছুদিন আগে তাঁর দলের দুজন চিকিৎসক প্রেষণে গ্রামে চলে গেছেন। আরও একজন শিগগিরই যাবেন। থাকবেন তিনিসহ দুজন। এমনিতেই চিকিৎসকের দুটি পদ খালি আছে।
হাসপাতালের পরিচালক প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস অবশ্য বলছেন, জনবলের ঘাটতি আছে পুরো প্রতিষ্ঠানেই। বার্ন একটি স্পেশাল ইউনিট বলে এখানকার জনবলের বিশেষ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে, যা এখন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নার্স বলেন, পোড়া ঘা পরিচর্যায় ব্যবহূত পাঁচটি সরঞ্জামের একটিমাত্র সেট আছে। অনেক সময় একই সরঞ্জাম একাধিক রোগীর জন্য ব্যবহার করতে হয়। দরকার অন্তত তিনটি সেট। পুড়ে যাওয়া রোগীর শরীর অনেক স্পর্শকাতর হয় বলে এসব ক্ষেত্রে সংক্রমণের কিছু ঝুঁকি থেকেই যায়।
ইউনিটটির নিজস্ব অস্ত্রোপচার কক্ষের জন্য ঘর বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু এখনো সেখানে যন্ত্রপাতি আসেনি। এ কারণে রোগীদের অন্য ওয়ার্ডের অস্ত্রোপচার কক্ষের সুযোগ পাওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয়। একটি নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র হওয়ার কথা ছিল। এখনো সেটি হয়নি।
তরিকুল ইসলাম বলেন, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও অস্ত্রোপচার কক্ষ না থাকায় অনেককে ঢাকায় পাঠাতে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সহায়তার ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে একাধিকবার জানানো হয়েছে। সর্বশেষ গত ৩০ জানুয়ারি ঢাকায় এক বৈঠকে তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে তাঁদের চাহিদার লিখিত একটি তালিকা দিয়েছেন।