ক্ষমতাসীন দলের দিকে প্রশাসন

যশোর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটের সরঞ্জাম বিভিন্ন কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অবৈধ যান নছিমনগুলোকে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে এনে জড়ো করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে তোলা ছবি, প্রথম আলো
যশোর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটের সরঞ্জাম বিভিন্ন কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অবৈধ যান নছিমনগুলোকে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে এনে জড়ো করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে তোলা ছবি, প্রথম আলো

খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার হারাবাগ গ্রামে ওই উপজেলা পরিষদের বিএনপি-সমর্থিত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আমির এজাজ খানের বাড়িতে গত বৃহস্পতিবার হামলা ও আগুন দেওয়া হয়। পরের দিন সেখানে হাজির হয় পুলিশ।

পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ফিরে যাওয়ার পর পাশের একটি গ্রামে সংঘর্ষের ঘটনায় এজাজ খানের সমর্থকদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী আশরাফুল আলমের সমর্থকেরা দুটি মামলা করেন। এর পর থেকেই বিএনপির সমর্থকদের ধরতে পুলিশের তৎপরতা বেড়ে যায় এবং এজাজ খানের বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় পুলিশের সব তৎপরতা থেমে যায়।

যোগাযোগ করা হলে বটিয়াঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক আওয়ামী লীগের মামলার কথা মনে করতে পারেন। কিন্তু বিএনপির প্রার্থীর বাড়িতে হামলার বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি। পরে কথা বলবেন বলে ফোন রেখে দেন এবং আর ফোন ধরেননি। খুলনার পাঁচ উপজেলায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের আটক করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে পুরোনো কোনো মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের স্থানে আটক ব্যক্তিদের আসামি করা হচ্ছে।

 এজাজ খান অভিযোগ করেন, পুলিশ তাঁর বাড়ি পরিদর্শন করতে গিয়েছিল। অথচ এ ব্যাপারে কিছু না করে অন্য একটি ঘটনায় তাঁর সমর্থকদের বিরুদ্ধে মামলাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া শুরু করে। তাঁর এলাকার সমর্থকেরা এখন বাড়িছাড়া।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের ব্যাপারে খুলনায় শক্ত অবস্থানে নেই নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও পুলিশ। বদলি বা বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হওয়ার মতো পরিস্থিতি এড়াতে প্রশাসনের কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা চলছেন স্থানীয় সাংসদ এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের মন জুগিয়ে। আর জেলার নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা কেবল দৈনন্দিন কাজের মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ রেখেছেন। ভোটের পরিবেশ তৈরি ও ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে আনার জন্য কোনো তৎপরতা কারোরই নেই।

 বিএনপির অভিযোগ, ভোটকে কেন্দ্র করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক শেখ হারুনুর রশিদ, রূপসা ও তেরখাদা উপজেলার সাংসদ এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা দলের সমর্থিত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে মাঠে রয়েছেন। পুলিশ ও প্রশাসন মূলত তাঁদের কথাই বেশি শুনছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মোস্তফা রশিদী সুজা বলেছেন, ভোটে কোনো হস্তক্ষেপ তিনি করছেন না।

 আজ রোববার খুলনার রূপসা, তেরখাদা, ফুলতলা, দাকোপ ও বটিয়াঘাটা—এই পাঁচটি উপজেলা পরিষদে ভোট গ্রহণ করা হবে। প্রতিটি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী রয়েছেন। নির্বাচনের দায়িত্বশীল সব পক্ষের নীরবতার কারণে আজ সুষ্ঠুভাবে ভোট হবে কি না, তা নিয়ে ভোটারদের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে খুলনার নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, তাঁদের নিজস্ব তথ্যমতে, পাঁচটি উপজেলার মধ্যে তিনটিতে (রূপসা, তেরখাদা ও ফুলতলা) ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ভোটকেন্দ্র দখল, জাল ভোট এবং ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটাতে পারে। আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায় থেকে যদি কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ না করা হয়, তবে পুলিশ প্রশাসন ও নির্বাচন কর্মকর্তারা এসব ঘটনা ঠেকাতে পারবেন না।

 কমিশনের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, রূপসা ও তেরখাদা উপজেলায় অবস্থিত থানাগুলোর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ভোটের দিন নীরব ভূমিকা পালনের জন্য আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা বলেছেন। তা না হলে বদলি করা হবে বলে হুমকিও দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তিনি কমিশনকে তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মাধ্যমে দুই দিন আগেই জানিয়েছেন। কিন্তু কোনো অগ্রগতির খবর পাননি। ওই পাঁচ উপজেলায় সরকার-সমর্থিত প্রার্থী ও সাংসদদের বিরুদ্ধে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অন্তত ৪৭টি লিখিত অভিযোগ এসেছে। কিন্তু একটি অভিযোগেরও সত্যতা খুঁজে দেখেনি রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইলিয়াস হোসেন বলেন, অভিযোগের পর কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে যখন যে প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, তাঁকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে।