জীবননগরে 'ভোট ডাকাতি'

কেন্দ্র দখল, বোমা হামলা, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, অগ্নিসংযোগসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনার মধ্য দিয়ে গতকাল রোববার চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের বাড়ি এই উপজেলার আন্দুবাড়িয়া গ্রামে।
নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৯-দলীয় জোট আজ সোমবার উপজেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে। জোটের পক্ষে জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রুহুল আমীন গতকাল দুপুরে এই হরতালের ডাক দেন।
এদিকে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াত ও বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীসহ সাতজন প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। দুপুর সাড়ে ১২টায় সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা এ ঘোষণা দেন। এর আগে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তাঁরা লিখিত অভিযোগ করেন এবং আবার ভোট গ্রহণের দাবি জানান।
নির্বাচন বর্জনকারী প্রার্থীরা হলেন বিএনপি-সমর্থিত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সাইদুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আরিফুজ্জামান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহফুজা পারভীন, জামায়াত-সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী খলিলুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মহিউদ্দিন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সামসুন্নাহার এবং স্বতন্ত্র নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী পেয়ারা বেগম।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র এবং নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জানান, শনিবার রাতেই নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালানো হয়। পাশাপাশি তাঁদের হুমকি দেওয়া হয়। রোববার সকাল আটটায় ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পরপরই ৫৩টি কেন্দ্রের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ-সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু মো. আবদুল লতিফ অমলের সমর্থকেরা দখল করে নেন। তাঁরা বিএনপি ও জামায়াত-সমর্থিত ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি ব্যালটে জোর করে সিল মেরে বাক্সে ফেলেন। এ সময় বাধা দিলে বেশ কয়েকজন প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দুর্বৃত্তরা কন্দর্পপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখল করে নেয়। এ সময় তিনটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। দুর্বৃত্তরা কেন্দ্রের নয়টি কক্ষে ঢুকে ব্যালট বাক্স ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। পরে ওই কেন্দ্রটিতে ভোট গ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়।
ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা স্বপন কুমার সিংহ বলেন, তাঁরা হামলাকারীদের চিনতে পারেননি। ওই কেন্দ্রে দায়িত্বরত এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, দুর্বৃত্তরা একযোগে হামলা চালায়। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই সবকিছু তছনছ হয়ে যায়। মহিলা আনসার সদস্য সন্ধ্যা রানী ও পারুল বেগম বলেন, দুর্বৃত্তরা হামলা শুরু করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব সদস্য প্রাণভয়ে কেন্দ্র ছেড়ে পালিয়ে যান।
কেন্দ্রের পোলিং এজেন্ট হাসান বুলবুল বলেন, হামলাকারীদের সবাই ছিল বহিরাগত। তারা একযোগে সব কটি কক্ষ থেকে ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা ও পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়।
বিএনপি-সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইদুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘জীবননগর উপজেলা নির্বাচনে ভোট ডাকাতির নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকেরা সকালে ৪০টি কেন্দ্র দখলে নিলেও বেলা ১০টার পর তাঁরা সব কটি কেন্দ্র দখলে নেয়। ভোট ডাকাতির মধ্য দিয়ে বিএনপির বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে।’
তবে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আনজুমান আরা দাবি করেন, স্বাভাবিক পরিবেশেই ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।