মিনিটে পড়েছে ৩০ ভোট

দৌলতগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মাত্র এক ঘণ্টায় এক হাজার ৮০০ ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্সে ফেলা হয়। অর্থাৎ প্রতি মিনিটে ভোট পড়েছে ৩০টি। কেন্দ্রটিতে ভোটারদের তেমন উপস্থিতি না থাকলেও সব কটি কক্ষ ও বুথ একদল যুবকের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। কেন্দ্রটির ১২টি কক্ষের কোনোটিতেই বিএনপি ও জামায়াত-সমর্থিত প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের পাওয়া যায়নি। সকাল ১০টা সাত মিনিটে কেন্দ্রটির ১ নম্বর কক্ষে ঢুকে পোলিং কর্মকর্তাদের অলস বসে থাকতে দেখা যায়। একজন পোলিং কর্মকর্তা জানান, ওই কক্ষে মোট ভোটার ২৬৫। তবে সকাল নয়টার মধ্যেই ২০০টি ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ব্যালট পেপার আনতে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কক্ষে গেছেন।
২ নম্বর কক্ষে ঢুকে দেখা যায় ভেতরে সাত-আটজন যুবক দাঁড়িয়ে। প্রত্যেকের হাতে টুকরো কাগজে পাঁচ-ছয়টি ভোটার নম্বর। তাঁরা নম্বর দেখে ব্যালট পেপার নিচ্ছেন এবং সিল মেরে বাক্সে ফেলছেন। তবে এই প্রতিবেদকসহ কয়েকজন সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে তাঁরা ভোটদানে বিরতি দেন। কক্ষ থেকে বের হতেই আবারও শুরু হয় একইভাবে ভোট প্রদান। বিদ্যালয় চত্বরে গেলে একাধিক ভোটার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। মো. ওয়াসিম নামে এক ভোটার অভিযোগ করেন, সকাল থেকেই কক্ষের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলেও ভেতরে ঢোকার ও ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি। রাহিমা বেগম (৬০) ও আকলিমা খাতুন (৪৫) নামে আরও দুই ভোটার অভিযোগ করেন, তাঁদের ভোট আগেই দেওয়া হয়ে গেছে। এভাবে অনেকেই ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দিতে না পেরে বাড়ি ফিরে যান।
জীবননগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা এই কেন্দ্রটি নিয়ন্ত্রণ করেছেন বলে এলাকার বেশ কয়েকজন অভিযোগ করেন। কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান সকাল সাড়ে ১০টায় জানান, একজন প্রার্থীর সমর্থকেরা কক্ষগুলোতে ঢুকে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও পোলিং কর্মকর্তাদের ওপর অনৈতিক চাপ সৃষ্টি করায় ভোট গ্রহণ এক ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয়।
প্রিসাইডিং কর্মকর্তার পাশের কক্ষে চারজন মহিলা পোলিং কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়। চারজনই অভিযোগ করেন, আনারস প্রতীকের লোকজন জোর করে ব্যালট কেড়ে নিতে চান। এরপর নানারকম হুমকি চলতে থাকে। বাধ্য হয়ে তাঁরা সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিএনপি ও জামায়াতের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়ার পর কেন্দ্রটিতে একতরফা ভোটগ্রহণ চলে। এদিকে ভোট গ্রহণ শেষে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, তিন হাজার ৫২৩ ভোটারের মধ্যে তিন হাজার ২৬৩ জন ভোট প্রদান করেছেন।