আন্দোলনে ছাত্রীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ

ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সায়াদের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে আজ রোববার ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ছবি: শাহীদুজ্জামান সাগর, ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সায়াদের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে আজ রোববার ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ছবি: শাহীদুজ্জামান সাগর, ময়মনসিংহ

সায়াদের হত্যাকারীদের নাম প্রকাশ করে মামলা করা, আজীবন বহিষ্কার ও দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আজও আন্দোলনে উত্তাল ছিল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। আন্দোলনের সামনের সারিতে ছিলেন ছাত্রীরা। তবে আন্দোলনরত ছাত্রীদের অভিযোগ, তাঁদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন দমিয়ে রাখতে হুমকি ও হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়া হয়েছে।

আন্দোলনরত ছাত্রীদের অভিযোগ, ‘শামীমা নাসরিন নামের ছাত্রলীগের এক কর্মী তাপসী রাবেয়া আবাসিক হলের কনিষ্ঠ ছাত্রীদের আন্দোলন করতে নিষেধ করেন। তিনি ভেটেরিনারি শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আন্দোলন করতে বলেন নতুবা বাড়ি চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন।’ শামীমা নাসরিন নিজেকে ছাত্রলীগের কর্মী অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি হওয়ায় ভেটেরিনারি অনুষদের ছাত্রীদের স্বার্থান্বেষী আন্দোলনে না গিয়ে এই অনুষদের ব্যানারে আন্দোলন করতে বলেছি।’ শামীমা নাসরিনের ওই হুমকির  পরে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করতে গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে হলের অতিথি কক্ষে যান। এ বিষয়টি হল প্রভোস্টকে জানান শামীমা। পরে হল প্রভোস্টের নির্দেশে হলের হাউস টিউটর গিয়ে ছাত্রীদের সেখান থেকে সরিয়ে দেন। হলের হাউস টিউটর অতিথি কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হল প্রভোস্ট আবদুল মোমেন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক রাত হওয়ায় ছাত্রীদের অতিথি কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেছি। ছাত্রীরা অস্বীকৃতি জানালে অতিথি কক্ষে তালা দেওয়া হয়। পরে তালা খুলে দেওয়া হয়েছে।’

গতকাল শনিবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে দাবি পূরণের আশ্বাস দেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. রফিকুল হক। তিনি আগামী মঙ্গলবার রাতের মধ্যে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। উপাচার্যের আশ্বাসের পরও আজ বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্মারক বিজয় ’৭১-এর পাদদেশে সমবেত হন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের বেশির ভাগই ছিলেন ছাত্রী। শিক্ষার্থীরা দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলে শিক্ষকেরাও যোগ দেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বিজয় ’৭১-এর সামনের রাস্তায় গিয়ে শেষ হয়। পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদী পথচিত্র অঙ্কনে অংশ নেন।

ছাত্রলীগের পৃথক শোক র‌্যালি: দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সায়াদ হত্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র থেকে ‘সংগ্রামী সাধারণ ছাত্র জনতা’র  ব্যানারে শোক র‌্যালি বের করে ছাত্রলীগ।

কেন এই হত্যা: আশরাফুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সায়াদ ছিলেন ২০১২-২০১৩ সালের নির্বাচিত শ্রেণী প্রতিনিধি। গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষদের ছাত্র সমিতির নির্বাচনে সহসভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ছিল তাঁর। তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজয় কুমার কুণ্ডুও নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। অনুষদের শিক্ষার্থীরা জানান, সায়াদের জনপ্রিয়তা নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল সুজয়ের। এ কারণেই তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা জানান, গত রোববার চতুর্থ বর্ষের ফিশারিজ বায়োলজি ও জেনেটিকস বিভাগের একটি কোর্সের ক্লাস পরীক্ষাটি শিক্ষককে বলে পেছানোর জন্য সায়াদকে চাপ দিয়েছিলেন সুজয় ও রোকন। তাঁদের চাপে একপর্যায়ে তিনি পরীক্ষা হবে না বললেও পরীক্ষা হয় এবং মাত্র দুজন অংশ নেন। শিক্ষক আবার পরীক্ষা নিতে রাজি না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে সুজয়ের সঙ্গে সায়াদের বাগবিতণ্ডা হয়। এর জেরে সোমবার সন্ধ্যায় হলের ২০৫ কক্ষে সায়াদকে ডেকে নিয়ে রড, লাঠি, হকিস্টিক দিয়ে নির্মমভাবে পেটানো হয়। পিটুনিতে সায়াদ বমি করেন ও মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। ওই কক্ষে তখন সুজয়, রোকনসহ ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা ছিলেন। ওই রাতে সায়াদকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে তিনি ময়মনসিংহ শহরের ট্রমা সেন্টারে মারা যান। কে বা কারা তাঁকে ট্রমা সেন্টারে নিল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ পরে সুজয় ও রোকনকে ময়মনসিংহের পাটগুদাম ব্রিজের মোড় থেকে গ্রেপ্তার করেছে।