গুলি করে প্রকৌশলীকে হত্যা

রাজধানীর কলাবাগানে গতকাল সোমবার রাতে সাদবীন হোসেন (২৫) নামের এক টেক্সটাইল প্রকৌশলীকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। পূর্ব শত্রুতার জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে পরিবার ও পুলিশের ধারণা।

একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি শেষ করে সাভারের এক পোশাক কারখানায় টেক্সটাইল প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন সাদবীন। পরিবারের সঙ্গে গ্রিন রোডের বাসায় থাকতেন তিনি।

পরিবারের সদস্যরা প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে সাদবীন মোটরসাইকেলে করে ধানমন্ডি এলাকায় তাঁর খালু শহীদুল আলম খানের বাসায় যান। সেখান থেকে রাত পৌনে একটার দিকে তিনি গ্রিন রোডের বাসায় ফিরছিলেন। মাঝপথে ল্যাবএইডের পেছনে সেন্ট্রাল পার্ক ভবনসংলগ্ন চায়ের দোকানের সামনে মোটরসাইকেল রেখে তিনি দাঁড়ান। এ সময় একটি প্রাইভেট কারে কয়েকজন যুবক গিয়ে তাঁকে গুলি করে এবং পালিয়ে যায়। গুলি সাদবীনের বাম বুকে বিদ্ধ হয়। স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে ল্যাবএইড হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিত্সক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার পর সাদবীনের খালু শহীদুল আলম খান বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় একটি মামলা করেন। এজাহারে আসামি হিসেবে জাহাঙ্গীর নাজিম নামে একজনের নাম উল্লেখ করেছেন তিনি।

এজাহারে শহীদুল আলম খান অভিযোগ করেন, রমনা থানার বেইলি রোড এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর নাজিম দীর্ঘদিন ধরে তাঁর কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। তিনি হত্যার হুমকিও দিচ্ছিলেন। এসব ঘটনায় তিনি ২০১১ সাল থেকে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় তিনটি মামলা করেন। সম্প্রতি একটি মামলায় জামিন পেয়ে আগের মতোই আচরণ শুরু করেন জাহাঙ্গীর। গতকাল রাত সোয়া ১২টার দিকে সিলভার রঙের একটি ব্যক্তিগত গাড়িতে করে তিন-চারজন সন্ত্রাসী নিয়ে জাহাঙ্গীর তাঁর (শহীদুল) ধানমন্ডি বাসার সামনে যান। চিত্কার-চেঁচামেচি করে তিনি মামলা উঠিয়ে নেওয়ার জন্য বলেন। না হলে তাঁকে ও তাঁর আত্মীয়স্বজনকে হত্যা করা হবে বলে তিনি হুমকি দেন। শহীদুল বিষয়টি ধানমন্ডি থানার পুলিশকে জানান। পুলিশের গাড়ি দেখে জাহাঙ্গীর ও অন্যরা দ্রুত সটকে পড়েন। শহীদুল বিষয়টি তাঁর আত্মীয়স্বজনকে জানান। তখন সাদবীন মোটরসাইকেলে করে তাঁর ধানমন্ডির বাসায় গিয়ে ঘটনা শুনে নিজ বাসার দিকে রওনা দেন।

এজাহারে শহীদুল আলম খান আরও উল্লেখ করেন, ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, সাদবীনকে গুলি করা যুবকেরা যে গাড়িতে এসেছিলেন সেটিও সিলভার রঙের।

যোগাযোগ করা হলে শহীদুল আলম খান দাবি করেন, ওই প্রত্যক্ষদর্শী তাঁকে জানিয়েছেন, ওই যুবকেরা প্রথমে সাদবীনের কাছে মোটরসাইকেলের চাবি চেয়েছিলেন। দিতে রাজি না হলে তাঁরা সাদবীনকে গুলি করেন। তবে মোটরসাইকেলটি অক্ষত আছে।

কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, এজাহারে উল্লেখ থাকা আসামি জাহাঙ্গীর নাজিম ও তাঁর সহযোগীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে সাদবীনের লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার তাঁর মরদেহ নবাবগঞ্জের দোহারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে তাঁর লাশ দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।