স্কুলব্যাগে অস্ত্র, ছাত্র সেজে ট্রেনে ডাকাতির চেষ্টা

তাঁরা সাত বন্ধু। প্রত্যেকের কাঁধে স্কুলের ব্যাগ। ভাবখানা এমন যেন স্কুলে যেতে ট্রেনের যাত্রী হয়েছেন। আসলে তাঁরা কেউই ছাত্র নন। স্কুলব্যাগে অস্ত্র ভরে ট্রেনে ডাকাতি করাই ছিল উদ্দেশ্য। তবে পুলিশের তৎপরতায় তা ভন্ডুল হয়ে যায়।
খানিকটা সিনেমা স্টাইলের এ ঘটনা ঘটেছে গতকাল মঙ্গলবার কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আন্তনগর এগারসিন্দুর ট্রেনে। ট্রেনটি ওই সময় কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকা যাচ্ছিল।
ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থী সেজে ট্রেনটিতে ওই তরুণদের ডাকাতির প্রস্তুতিকালে এক ব্যক্তি রেলওয়ে পুলিশকে মুঠোফোনে জানান, যাত্রীবেশী কয়েকজন তরুণের ব্যাগে অস্ত্র রয়েছে। তাঁরা ট্রেনে ডাকাতি করতে পারেন। তাৎক্ষণিকভাবে রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের সদস্যরা অভিযানের প্রস্তুতি নিয়ে ট্রেনটি আসার অপেক্ষায় থাকেন। পরে ট্রেনটি ভৈরব স্টেশনে যাত্রাবিরতি করার ১০ মিনিটের মধ্যে চার তরুণ ধরা পড়েন। তিনজন পালিয়ে যান। স্কুলব্যাগ থেকে উদ্ধার করা হয় দেশি অস্ত্রশস্ত্র।
সূত্র আরও জানায়, ভোর ছয়টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ট্রেনটি কিশোরগঞ্জ ছেড়ে যায়। ভৈরব স্টেশনে যাত্রাবিরতি করে আটটা ১৫ মিনিটে। ২০ মিনিট পর ট্রেনটির ভৈরব ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল আটটা থেকে প্ল্যাটফর্মে অবস্থান নেয়। যাত্রাবিরতির সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন কামরায় তল্লাশি শুরু করে। পরে ছাদে চার তরুণের সন্ধান মেলে।
গ্রেপ্তার তরুণেরা হলেন নড়াইলের লোহাগড়ার আসতাইল গ্রামের মিজান শেখ (২০), নেত্রকোনার দুর্গাপুরের কুলনজা গ্রামের আশিক মিয়া (২০), কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের ছোড়ারবন গ্রামের মো. শাহিন (১৮) ও ভৈরবের মানিকদী নয়াহাটি গ্রামের মো. ইমরান (২০)। তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সাতটি ধারালো ছুরি, একটি দা ও নাইলনের রশি।
পুলিশ জানায়, অভিযানকালে পালিয়ে যাওয়া অপর তিন তরুণের ব্যাগে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল বলে তাদের ধারণা।
গ্রেপ্তার হওয়া মো. ইমরান জানান, তাঁরা প্রত্যেকে পূর্বপরিচিত। মো. শাহিন দলনেতা। অপর গ্রেপ্তার আশিক মিয়া জানান, সঙ্গে স্কুলব্যাগ থাকলে যাত্রীরা তাঁদের ছাত্র মনে করবেন—এই চিন্তা থেকে তাঁরা স্কুলব্যাগ বহন করছিলেন। শাহিনের দাবি, এবারই প্রথম অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশ্যে কিশোরগঞ্জ থেকে ট্রেনের যাত্রী হন তাঁরা। তবে ট্রেন ছাড়ার পর ভৈরব পর্যন্ত তাঁরা সুবিধা করে উঠতে পারেননি।
ওসি সাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তরুণেরা ট্রেনে ডাকাতির প্রস্তুতির কথা স্বীকার করেছেন। অস্ত্রগুলো স্কুলব্যাগে তাঁরা বহন করছিলেন। চলন্ত ট্রেনে অপরাধ সংঘটিত করাই তাঁদের কাজ। এ ব্যাপারে থানায় মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার চারজনকে নিয়ে বাকিদের ধরতে অভিযান চলছে।