যুক্তরাষ্ট্রে তুঁত

তুঁত ফলের ছবিটি মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার উডব্রিজ এলাকা থেকে তোলা ষ ছবি: লেখক
তুঁত ফলের ছবিটি মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার উডব্রিজ এলাকা থেকে তোলা ষ ছবি: লেখক

যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় আমার প্রথম সকাল। খুব ভোরে ঘুম ভেঙেছে। মাসুদ, পল্লব ওরা অঘোরে ঘুমাচ্ছে। পেছনের বারান্দায় এসে দাঁড়াই। পাখির কিচিরমিচির আর সতেজ বাতাস ভোরের নিস্তব্ধতাকে আরও মধুময় করে তুলেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই উপলব্ধি করি, ভোরের এই মিষ্টি বাতাস খুব চেনা একটি ফুলের সৌরভমাখা। সামনে তাকাতেই খানিকটা দূরে একটি লতানো ঝোপে অনেকগুলো ফুল চোখে পড়ে। কাছে গিয়ে দেখি, এ তো হানিস্যাকল, অবাক কাণ্ড! আমাদের দেশেও আছে। পার্থক্য শুধু এটুকুই—ফুলটি এখানে বুনো আর আমাদের দেশে পালিত।
একটি সরু পথ পেরিয়ে কিছুটা সামনে এগোতেই দেখি আরেকটি চেনা ফল। এই বিদেশ-বিভুঁইয়ে তুঁতগাছ! দারুণ ব্যাপার। দেশে প্রথম তুঁতগাছ দেখি রাজশাহীর সেরিকালচারে। সেখানে গুটি রেশমের জন্য এ গাছ বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়। মূলত এই রেশম গুটি থেকেই প্রস্তুত করা হয় সিল্কের কাপড়। অবশ্য পরে ফলভর্তি গাছ দেখি গাজীপুরের সালনা অরচ্যাডে। রেশম পোকার খাবার হিসেবে এ গাছের পাতাই আসলে মুখ্য। এ কারণে আমাদের দেশে ফল ততটা দেখা যায় না বা খাওয়ার অভ্যাসও গড়ে ওঠেনি। আমাদের দেশে এ ফলের কোনো কদর না থাকলেও সারা পৃথিবীতে তুঁত ফল Mulberry নামে বিখ্যাত। এশিয়া, ইউরোপ এবং আফ্রিকার অনেক দেশেই এর চাষ হয়। দেশের উত্তর জনপদেও কেউ কেউ বাণিজ্যিকভাবে তুঁত চাষ করেন। তবে সেখানে ফলের কোনো কদর নেই। পৃথিবীতে বুনো এবং পালিত মিলিয়ে তুঁতের অসংখ্য রকমফের চোখে পড়লেও স্বীকৃত জাত রয়েছে মাত্র ১৬টির মতো। আর রঙের মধ্যে লাল, কালো এবং সাদার প্রাধান্যই বেশি। বর্তমানে কিছু কিছু স্বাদু জাতের আবাদিত ফলও বাজারজাত করা হচ্ছে। গাছ পত্রমোচি, গুল্ম বা ছোট আকৃতির, সাধারণত ৫ থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। পাতা ডিম্বাকৃতির, খসখসে, কিনারা দাঁতানো এবং শিরা সুস্পষ্ট। এখানকার তুঁতগাছে ফুল আসে ফেব্রুয়ারি-মার্চে, ফল পাকে মে-জুনের দিকে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেকগুলো ফল মিলে একটি সম্পূর্ণ ফল তৈরি করে। কাঁচা ফলের রং সবুজ, তারপর পর্যায়ক্রমে লাল ও কালো রং ধারণ করে। গাছে একই সঙ্গে কাঁচা এবং পাকা ফল বেশ নান্দনিক। কালো রঙের পরিপক্ব ফল রসাল, নরম ও টক-মিষ্টি স্বাদের। ভারি সুস্বাদুও বটে। ফল এবং রেশম ছাড়া তুঁতের (Morus nigra) আরও বহুবিধ ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। পাকা ফলের রস পিত্ত, কফ ও জ্বরনাশক। বাকল ও শিকড়ের নির্যাস কৃমিনাশক। এ ছাড়া ফল থেকে জ্যাম, জেলি, স্কোয়াশ ও নানা রকম পানীয় তৈরি করা হয়। M. alba প্রজাতির ফল গোলাপি-সাদা। মানের দিক থেকে এ ফল উৎকৃষ্ট এবং খেতেও সুস্বাদু। বংশ বৃদ্ধি, বীজ বা শাখাকলমে।