একতরফা নির্বাচন, ভোট কারচুপি ও কেন্দ্র দখল

এক কিশোরকে দিয়ে জাল ভোট দেওয়ানো হচ্ছে৷ পেছনে নির্বিকার পোলিং কর্মকর্তা ও এজেন্টরা৷ ছবিটি গতকাল বরগুনার তালতলী উপজেলার কচুপাত্রা প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে তোলা৷ প্রথম আলোর নীতি অনুযায়ী শিশুটির পরিচয় গোপন রাখতে মুখ ঝাপসা করে দেওয়া হলো । ছবি: প্রথম আলো
এক কিশোরকে দিয়ে জাল ভোট দেওয়ানো হচ্ছে৷ পেছনে নির্বিকার পোলিং কর্মকর্তা ও এজেন্টরা৷ ছবিটি গতকাল বরগুনার তালতলী উপজেলার কচুপাত্রা প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে তোলা৷ প্রথম আলোর নীতি অনুযায়ী শিশুটির পরিচয় গোপন রাখতে মুখ ঝাপসা করে দেওয়া হলো । ছবি: প্রথম আলো

চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীরা মাঠ ছেড়ে দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে একতরফা নির্বাচন হয়েছে৷ গতকাল সোমবার ষষ্ঠ দফার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এখানে ভোট গ্রহণ করা হয়৷ভোট শুরুর সাড়ে চার ঘণ্টা পর বিএনপি-সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী শরিফুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমের কাছে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন৷ এ সময় তিনি আওয়ামী লীগ-সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী তানবীর ভূঞার বিরুদ্ধে তাঁর পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া, কর্মীদের মারধর করা, ভোটকেন্দ্র দখল, ভোট কারচুপি এবং জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ আনেন৷
বিএনপির ‘বিদ্রোহী’ চেয়ারম্যান প্রার্থী কাজী রফিকুল ইসলামও প্রায় একই অভিযোগ এনেছেন৷ তবে তিনি নির্বাচন বর্জন না করে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকলেও ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে ৩০টি কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘আমি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী লড়াই চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি৷ কিন্তু আওয়ামী লীগ-সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে পুলিশসহ সরকারের বিভিন্ন বাহিনী আতঙ্ক ছড়িয়ে আমার কর্মীদের মাঠ ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছে৷’ এদিকে বেলা তিনটায় জাতীয় পার্টি-সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ইমদাদুল হকও নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন৷
আওয়ামী লীগ-সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী তানবীর ভূঞা তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে৷ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা৷
তবে উপজেলার ৫৮টি ভোটকেন্দ্রের ১৫টিতে সরেজমিনে ভোটার উপস্থিতি দেখা যায়নি৷ সকাল নয়টায় বুধন্তী ইউনিয়নের বুধন্তী আহ্লাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সাত নম্বর বুথে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে তখন পর্যন্ত একটি ভোটও পড়েনি৷ কেন্দ্রটির মোট দুই হাজার ৪৬০টি ভোটের মধ্যে তখন পর্যন্ত মাত্র ৫০টি ভোট পড়ে৷

২০০৯ সালের ৩ আগস্ট তিতাস নদের পূর্ব পারের ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে বিজয়নগর উপজেলা গঠিত হয়৷ এরপর উপজেলায় এটিই প্রথম নির্বাচন৷ নির্বাচনের এক দিন আগেও ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা যায়৷ অথচ ভোটের দিন দেখা গেল ভিন্ন চিত্র৷ এ ব্যাপারে উপজেলা বিএনপির সভাপতি হারুন মুন্সি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পক্ষে আগের রাতে প্রচার করা হয়েছে, ভোট দিয়ে কোনো লাভ নেই৷ ফলাফল নির্ধারিত হয়ে আছে৷ এখানে সরকারি দলের বিজয় অনিবার্য৷’ তিনি দাবি করেন, এমন প্রচারণার কারণে তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরা বিভ্রান্ত হয়ে মাঠ ছেড়ে দিয়েছেন৷ ভোট শুরু হওয়ার পর এজেন্টদের বের করে দিয়ে কেন্দ্র দখলের মাধ্যমে সরকারি দল একতরফা নির্বাচন করেছে৷
চর ইসলামপুর, বড় পুকুরপাড়, গোয়াখোলা, ফুলবাড়িয়া, সেজামোড়া, কামালমোড়া, সিঙ্গারবিলসহ ১৫টি কেন্দ্রে বহিরাগতরা আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কেন্দ্র দখল করে ব্যাপক হারে জাল ভোট দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ এর মধ্যে আখাউড়া পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফার নেতৃত্বে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একদল কর্মী মোটরসাইকেলে সিঙ্গারবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে বিরোধীদের প্রতিরোধের মুখে পড়েন৷

জানতে চাইলে আখাউড়া পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফা বলেন, পাশের উপজেলার নির্বাচন বলে নিছক কৌতূহলবশত তাঁরা দেখতে গিয়েছিলেন৷ এলাকাবাসী তাঁদের ভুল বুঝেছে৷
বেলা ১১টার দিকে পাহাড়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা েগছে, বিএনপি-সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী শরিফুল ইসলামের ছয়জন পোলিং এজেন্টের সবাই কেন্দ্র ছেড়ে বের হয়ে এসেছেন৷ ওই এজেন্টদের একজন সোহেল রানা বলেন, এক মহিলা জাল ভোট দিতে এলে তাঁরা বাধা দেন৷ এ নিয়ে আওয়ামী লীগের পোলিং এজেন্টদের সঙ্গে তাঁদের কথা-কাটাকাটি হয়৷ একপর্যায়ে তাঁদের ওপর আক্রমণ করা হয়৷ সেখানে উপস্থিত বিজিবির টহল দলও তাঁদের ওপর চড়াও হয়৷