স্যঁাতসেঁতে কক্ষে নষ্ট হচ্ছে খতিয়ান

চট্টগ্রামে স্যাঁতসেঁতে পরিত্যক্ত ভবনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে জায়গাজমির পিএস (পাকিস্তান সার্ভে) খতিয়ানের বালামবহি। খতিয়ানের নকলের জন্য এসে ফিরে যেতে হচ্ছে শত শত মানুষকে। ফলে জমি কেনাবেচা, মামলা-মোকদ্দমাসহ যাবতীয় কাজ সারতে ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ।
সরেজমিনে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কার্যালয়ে অবস্থিত পিএস রেকর্ড রুমে গিয়ে দেখা গেছে, ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। বালাম বইয়ের ওপর পড়ছে বৃষ্টির পানি। পানিতে মুছে গেছে অনেক বালাম বইয়ে থাকা তথ্য। ছিঁড়ে গেছে অনেক বালাম বই। কেউ খতিয়ানের জন্য এলে বালাম বই ভিজে থাকায় সহজে খতিয়ানের নকল দেওয়া যাচ্ছে না। আর ছিঁড়ে যাওয়ায় কিংবা পাতা হারিয়ে যাওয়ায় অনেক বালাম বই থেকে হারিয়ে গেছে খতিয়ান। স্যাঁতসেঁতে কক্ষটিতে সারি সারি করে রাখা হয়েছে নগর ও জেলার পিএস খতিয়ানের বালাম বই। মেঝেতেও রয়েছে বৃষ্টির পানি।
নগরের দক্ষিণ পাহাড়তলী থেকে আসা আবু বক্কর প্রথম আলোকে বলেন, ‘পিএস খতিয়ান না পাওয়ায় আমার জায়গাটা বিক্রি করতে পারছি না। কিন্তু চিকিৎসার জন্য জায়গা বিক্রি করা খুব দরকার। বালাম বই ভিজে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় খতিয়ানের নকল নিতে পারছি না।’
জমির নামজাির করতে খতিয়ানের জন্য এসেও পাচ্ছেন না রাউজানের কদলপুরের মুছা মিয়া। এভাবে প্রতিদিন খতিয়ানের জন্য এসে ফিরে যেতে হচ্ছে প্রায় অর্ধশত মানুষকে।
নগর ও জেলার প্রায় ৫০ হাজার খতিয়ানের বালাম বই রয়েছে ওই রেকর্ড রুমে। পর্তুগিজ আমলে নির্মিত ভবনটি ১৫ বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।
বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে বর্ষাকালে বৃষ্টি পড়ে নষ্ট হচ্ছে বালাম বইগুলো। জরুরি ভিত্তিতে ভবনটি মেরামতের জন্য বলা হলেও তা সংস্কার করা হচ্ছে না। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পিএস রেকর্ড রুমটি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বালামবহি, কাগজপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এগুলো হারিয়ে গেলে মানুষ ভোগান্তিতে পড়বে। জায়গাজমির রেকর্ড হালনাগাদ, নামজারি, রেজিস্ট্রি, মামলা-মোকদ্দমা করতে পারবে না মানুষ। এ ছাড়া একটি জায়গার আরএস, পিএস ও বিএস খতিয়ান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে পিএস খতিয়ান না থাকলে রেকর্ড হালনাগাদ হবে না।’
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) রুহুল আমিন প্রথম আলোকে জানান, ভবনটি সংস্কারের জন্য গণপূর্তকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হলেও তারা সাড়া দিচ্ছে না। বর্ষা মৌসুম শেষ হলে নতুন ভবন তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হবে। এখন বালামবহি যাতে নষ্ট না হয় প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে রাখা হচ্ছে।
গণপূর্ত বিভাগ চট্টগ্রামের উপসহকারী প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন ভুইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘রেকর্ড রুমটি মেরামতের জন্য টাকা বরাদ্দ চেয়ে ঢাকায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। আশা করি শিগগিরই কাজ শুরু করা যাবে।’