অসময়ে বিষমুক্ত লাউ

গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার ভাঙ্গামোড় গ্রামের কৃষক লাভলু মিয়া (৫৫) এ পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছেন।
লাভলু মিয়া বললেন, ‘এই জমি থেকে আরও প্রায় ৮০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করতে পারব। অসময়ে লাউয়ের চাষ করে এত লাভ হবে, কখনো ভাবিনি। তাই আগামীবার দুই বিঘা জমির পুরোটাই লাউ চাষ করব সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তিনি বলেন, এই লাউ বিষমুক্ত। কারণ, লাউয়ের খেতে কোনো কীটনাশক ব্যবহার করা হয়নি। তিনি জানান, বসতভিটাসহ দুই বিঘা জমি তাঁর সম্পদ। বাড়িসংলগ্ন ওই জমিতে কোনো ফসল হতো না। জমির আয় দিয়ে ছয় সদস্যের সংসার চালাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হতো। তাই কৃষি বিভাগের পরামর্শে ৪০ শতক জমিতে এবার লাউ চাষ করেছেন তিনি। উৎপাদন খরচ পড়েছে মোট তিন হাজার টাকা।
লাভলু মিয়ার মতো পাশের হবিবুল্যাপুর গ্রামের কৃষক গৌর চন্দ্র (৫২) বলেন, ‘আমি এক হাজার টাকা ব্যয়ে পাঁচ শতক জমিতে লাউ চাষ করেছি। এ পর্যন্ত ছয় হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছি। আরও ২৫ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করতে পারব।’ একই উপজেলার পচার বাজার গ্রামের কৃষক নুরে আলম (৪৫) দেড় হাজার টাকা খরচ করে ১২ শতক জমিতে লাউ চাষ করেন। নুরে আলম বলেন, ‘এ পর্যন্ত ১০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছি। আরও ৪০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করতে পারব।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই তিনজনের মতো উপজেলার ৩৩ জন কৃষক এবার গ্রীষ্মে লাউ চাষ করে সাফল্য অর্জন করেছেন।
সাদুল্যাপুর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রব বলেন, লাউয়ের এ রকম ফলন হবে, কৃষকেরা আগে বিশ্বাস করতেন না। পরে তাঁদের হাতেকলমে লাউ চাষ পদ্ধতি শেখানো হয়। এ ছাড়া সার্বক্ষণিকভাবে তাঁদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, প্রথম অবস্থায় কৃষকদের লাউ চাষে আগ্রহী করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। কিন্তু উৎপাদনে সাফল্য দেখে অন্য কৃষক উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। কৃষি বিভাগ থেকেও কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘সেক্স ফেরোমন’ পদ্ধতি ব্যবহার করার কারণে কোনো কীটনাশক ছাড়াই এ লাউ উৎপাদন হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্র জানায়, সাধারণত শীত মৌসুমে লাউ উৎপাদন হয়ে থাকে। কিন্তু কৃষি বিভাগের উদ্যোগে উপজেলার দুই একর জমিতে এবারই প্রথম ডায়না জাতের লাউ চাষ হয়েছে। উপজেলার ৩৩ জন কৃষককে এ জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে এই জাতের লাউয়ের চাষ করতে হয়। দুই মাসের মাথায় ফলন পাওয়া যায়। বর্তমান বাজারে প্রতি ১০০টি লাউ দুই হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই লাউ চাষে বীজ কেনাসহ প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হবে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা।