চিরনিদ্রায় শায়িত কবি আবুল হোসেন, বাংলা একাডেমিতে শেষ শ্রদ্ধা

শেষবারের মতো বাংলা একাডেমির সবুজ চত্বরে গতকাল নেওয়া হয় কবি আবুল হোসেনকে। তবে তিনি ছিলেন কাফনে মোড়ানো। সেখানে তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান বন্ধু, স্বজন, শুভানুধ্যায়ী আর সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষেরা l প্রথম আলো
শেষবারের মতো বাংলা একাডেমির সবুজ চত্বরে গতকাল নেওয়া হয় কবি আবুল হোসেনকে। তবে তিনি ছিলেন কাফনে মোড়ানো। সেখানে তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান বন্ধু, স্বজন, শুভানুধ্যায়ী আর সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষেরা l প্রথম আলো

অতীতে বাংলা একাডেমির সবুজ চত্বরে তিনি এসেছিলেন বহুবার। এক বছর আগে এসেছিলেন কবি শামসুর রাহমান স্মৃতি পুরস্কার গ্রহণ করতে। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে সেদিন অতীতের স্মৃতিচারণাও করেছিলেন। প্রিয় বাংলা একাডেমির সবুজ চত্বরে গতকালও ছিল তাঁর উপস্থিতি। কিন্তু ছিলেন নীরব, নিথর, নিষ্প্রাণ। কাফনে মোড়া শরীরে ঘুমিয়ে ছিলেন বর্ধমান হাউসের সামনে নজরুল মঞ্চে। সেখানে বন্ধু, স্বজন, শুভানুধ্যায়ী আর সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষজন সজল চোখে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাল। গত রোববার রাতে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মঙ্গলবার বেলা দুইটায় একাডেমির নজরুল মঞ্চে কবির মরদেহ নিয়ে আসা হয়। এ সময় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানায়। শ্রদ্ধা নিবেদন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা মসিউর রহমান, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, কবি সৈয়দ শামসুল হক, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, কবি আনোয়ারা সৈয়দ হক, আসাদ চৌধুরী, নাট্যজন আতাউর রহমান, শিশুসাহিত্যিক আখতার হুসেন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ইকবাল বাহার চৌধুরী, গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর প্রমুখ। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের মধ্যে ছিল উদীচী, ছায়ানট, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, বাংলা একাডেমি কর্মচারী ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
শুরুতে প্রয়াত কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, কবি আবুল হোসেন ছিলেন একজন সুস্থির ও ধীর প্রকৃতির মানুষ। তিনি শুধু একজন কবিই ছিলেন না, একই সঙ্গে ছিলেন সমাজ-সচেতন মানুষ। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘আবুল হোসেন আমাদের আধুনিকতা শিক্ষা দিয়েছেন। পশ্চাৎপদ সময়ে তাঁর ভবিষ্যৎ-দৃষ্টি ছিল অতুলনীয়। তাঁর পথ ধরেই পরবর্তী কবিরা আধুনিক কবিতার প্রতি ধাবিত হয়েছেন।’
সৈয়দ শামসুল হক বলেন, ‘আজকের দিনটা আমার কাছে খুবই শোকের একটা দিন। বাংলা সাহিত্য আবুল হোসেনের মৃত্যুতে একজন পুরোধাকে হারাল। শিল্পের দাবি মিটিয়ে সবার ওপরে তিনি ছিলেন মানুষের কবি। বাংলা সাহিত্যে এক অসামান্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে তাঁর কবিতা।’ বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, কাব্য রচনার ক্ষেত্রে বাক্য নির্মাণে তিনি যে দক্ষতা দেখিয়েছেন, তা আধুনিক বাংলা সাহিত্যে বিরল। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘তিনি ছিলেন দেশে প্রবীণতম কবি। তাঁর প্রতি আমাদের যে সম্মান করার কথা ছিল, আমরা তা করতে ব্যর্থ হয়েছি।’
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আবুল হোসেনের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় মিন্ত্রপরিষদের সদস্যসহ কবি-লেখক-সংস্কৃতিকর্মী ও সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় মিরপুর শহীদ বুিদ্ধজীবী কবরস্থানে। সেখানেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।