বই পড়ার নতুন আন্দোলন

রাজশাহী বিভাগের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বই পড়ার নতুন এক আন্দোলন শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় রাজশাহীতে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিভাগীয় কমিশনার হেলালুদ্দীন আহমদ।
রাজশাহী বিভাগের সব জেলা ও উপজেলায় একযোগে বই পড়া অনুষ্ঠান শুরু হয়। এই কর্সসূচির আওতায় বিভাগের প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আগামী এক মাসের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৩টি বই কমপক্ষে একবার পড়বেন। শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানোর জন্য প্রাথমিক শিক্ষার রাজশাহী বিভাগীয় উপপরিচালক দোলোয়ার হোসেন এই উদ্যোগ নিয়েছেন।
রাজশাহী: রাজশাহী প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) মিলনায়তনে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপপরিচালক দোলোয়ার হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এস এম তুহিনুর আলম। প্রাথমিক শিক্ষার রাজশাহী বিভাগের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ স্বাগত বক্তব্য দেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন রাজশাহী পিটিআইয়ের সুপারিনটেনডেন্ট রেজাউল হক। সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন বোয়ালিয়া থানা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শিক্ষকদের উদ্দেশে লেখা উপপরিচালকের চিঠি পড়ে শোনান শিক্ষক আনজুমান আরা। এতে বলা হয়, শিক্ষকের মান বাড়ানোর জন্য প্রথমেই প্রয়োজন শিক্ষকের পাঠ্যপুস্তকভিত্তিক পর্যাপ্ত জ্ঞান। একজন শিক্ষক তখনই একজন ভালো শিক্ষক, যখন তিনি একজন ভালো ছাত্রের চেয়ে বেশি পড়াশোনা করেন এবং বেশি জানার জন্য কৌতূহলী থাকেন। মাঠপর্যায়ের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষকের পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞান খুবই সীমিত।
চিঠিতে আরও বলা হয়, শুধু শিক্ষক নন, প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তার পাঠ্যপুস্তক পড়তে হবে।
অনুষ্ঠান চলাকালে প্রধান অতিথি মঞ্চে বসেই পঞ্চম শ্রেণির একটি বই পড়েন। তিনি বলেন, অজানা বেশ কিছু বিষয় তিনি এই বই থেকে জানতে পেরেছেন। তিনি আগামী এক মাসের মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির সব বই পড়ার ঘোষণা দেন। তিনি পঞ্চম শ্রেণির বই থেকে মুক্তিযুদ্ধের অংশটি পাঠ করেন। শিক্ষকেরাও তাঁর সঙ্গে বই হাতে দাঁড়িয়ে পাঠ করেন।
জেলা প্রশাসক চতুর্থ শ্রেণির বিজ্ঞান বই থেকে পাঠ করেন।
অনুষ্ঠানে এক মাসের মধ্যে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির সব পাঠ্যবই পড়ার শপথ নেন শিক্ষকেরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ: শহরের তাজকেরাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবীর। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুস সাত্তার সরকার, উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমীন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মির্জা শাকিলা দিল হাছিন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামীম আহমেদ। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, এ বছর প্রাথমিক স্তরে পাঠ্যবইয়ে অনেক নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিষয়গুলো শিক্ষক, শিক্ষা কর্মকর্তা ও অভিভাবকদের ভালোভাবে জানা দরকার। এতে করে পাঠ্যপুস্তকে কোনো ভুল-ত্রুটি থাকলে তা জানা যাবে। শিক্ষকেরা পাঠ্যপুস্তক সম্পর্কে ভালোভাবে জানলে শ্রেণিকক্ষে ভালোভাবে পড়াতে পারবেন। শিক্ষকেরা ঠিকমতো পাঠদান করছেন কি না এটা শিক্ষা কর্মকর্তাদেরও জানা দরকার। এ জন্য তাঁদেরও ভালোভাবে পাঠ্যপুস্তক পড়তে হবে। উদ্বোধনী দিনে বিদ্যালয়গুলোতে এ কর্মসূচি শুরু হলেও রমজানের ছুটিতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা বাড়িতে বসে পাঠ্যপুস্তকগুলো পড়বে। প্রথম ধাপে মাসব্যাপী এ কর্মসূচি শেষে মূল্যায়নও করা হবে।
নওগাঁ: জেলা প্রশাসক মো. এনামুল হক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বই পড়া কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। বেলা সাড়ে ১১টায় সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম মণ্ডল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক ও ইউএনও বেগম হাসিনা আকতার। অনুষ্ঠানে সদর উপজেলার বরুণকান্দি শৈলগাছি ক্লাস্টারের (এলাকা) প্রায় ৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা উপস্থিত ছিলেন।
জয়পুরহাট: শহরের জয়পুরহাট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাদার্স ক্লাব ভবনে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইয়াছিন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাইয়ার সুলতানা। বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইয়াছিন, জয়পুরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নূর ইসলাম, সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আতিকুর রহমান, মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজুর রহমান, শিক্ষক ফারুক হোসেন, আবদুল হাই ও মাসুদা আক্তার।
রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ): উপজেলায় কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয় দুপুর ১২টায়। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি কার্যালয়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফিরোজ শাহ্। বক্তব্য দেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আয়নুল হক, ভাইস চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আপেল মাহমুদ, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ধানগড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেসমিন আরা প্রমুখ।
শেরপুর (বগুড়া): উপজেলায় বেলা সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। শেরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মিলনায়তনে এর আয়োজন করা হয়। উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা খন্দকার মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ইউএনও এ কে এম সরোয়ার জাহান ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বক্তৃতা করেন।
{প্রতিবেদন তৈরি করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ), শেরপুর ও আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি}