নয় বছর ধরে শিশু পর্নো তৈরিতে যুক্ত টিপু কিবরিয়া

নয় বছর ধরে পথশিশুদের দিয়ে পর্নো ছবি তৈরি করে ইন্টারনেটে পে-ওয়েবসাইটে বিক্রি করে আসছেন শিশুসাহিত্যিক টি আই এম ফখরুজ্জামান ওরফে টিপু কিবরিয়া। তিনি আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, তিনি পর্নো ছবি তৈরি করে জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডের তিন ব্যক্তির কাছে পাঠাতেন। এঁদের একেকজনের কাছ থেকে প্রতি মাসে তিনি ৫০ হাজার করে দেড় লাখ টাকা পেতেন।
তবে এ-সংক্রান্ত মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, তদন্তে জানা গেছে, টিপু কিবরিয়া তাঁর তৈরি পর্নো ছবি ১৩টি দেশের ১৩ জন নাগরিকের কাছে পাঠাতেন। এসব বিদেশি নাগরিককে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব দেশের মধ্যে আছে কানাডা, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা, মধ্য ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ।
সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও জানান, বিদেশিদের চাহিদা মোতাবেক টিপু কিবরিয়া তাদের জন্য নতুন নতুন ছেলে শিশু সংগ্রহ করে পর্নো ছবি তৈরি করতেন। রাজধানীর মুগদায় তাঁর স্টুডিও থেকে এমন চার-পাঁচ শ শিশুর ছবি উদ্ধার করেছে সিআইডি। তাদের দিয়ে তৈরি করা কয়েক হাজার পর্নো ছবিও উদ্ধার করা হয়।
জবানবন্দিতে টিপু কিবরিয়া জানান, ছবি তোলার কথা বলে বা ভালো কাজ দেওয়ার কথা বলে ফুসলিয়ে কমলাপুর, সায়েদাবাদ, সদরঘাটসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে পথশিশুদের মুগদার স্টুডিওতে নিয়ে আসতেন তাঁর দুই সহযোগী নুরুল আমিন ও নুরুল ইসলাম। আরেক সহযোগী শাহারুল ইসলামের কাজ ছিল বিদেশ থেকে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন মানি ট্রান্সফারের মাধ্যমে আসা টাকা উত্তোলন ও স্টুডিওর দেখাশোনা করা। এই তিন সহযোগীকেও সিআইডি গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরাও সম্প্রতি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, টিপু কিবরিয়া একটি ফটোগ্রাফিক সোসাইটি গড়ে তোলেন। মূলত এর আড়ালে তিনি ২০০৫ সাল থেকে ছেলে পথশিশুদের দিয়ে পর্নো ছবি নির্মাণ ও ইন্টারনেটে বিদেশে পাঠানো শুরু করেন।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে বাংলাদেশের সিআইডির সংঘবদ্ধ অপরাধ প্রতিরোধ দল (অর্গানাইজড ক্রাইম টিম) অনুসন্ধান চালিয়ে এ চক্রটিকে শনাক্ত করে। গত ১০ জুন রাজধানীর খিলগাঁওয়ের তারাবাগের বাসা থেকে টিপু কিবরিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর তথ্যের ভিত্তিতে তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি আইনের ২০১২-এর ৮(৬)(৭) ধারায় মামলা হয়েছে।
ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের গত ১৫ জুন আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে টিপু কিবরিয়া বলেন, ১৯৯১ সাল থেকে ১০ বছর তিনি সেবা প্রকাশনীর কিশোর পত্রিকার সহকারী সম্পাদক ছিলেন। ২০০৩ সাল থেকে ফ্রি-ল্যান্স আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ শুরু করেন। পথশিশুদের বিভিন্ন ছবি তুলে ওয়েবসাইটে দিতেন। একপর্যায়ে কয়েকজন বিদেশি তাঁর সঙ্গে ইন্টারনেটে যোগাযোগ করে। তাদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ছেলেশিশুদের পর্নো ছবি তৈরি শুরু করেন ২০০৫ সাল থেকে। এ কাজে সহযোগিতার জন্য সহযোগী নুরুল ইসলাম ও নুরুল আমিনকে প্রতি সপ্তাহে দুই হাজার টাকা করে দিতেন। আর যেসব শিশুকে নিয়ে তিনি পর্নোগ্রাফি করাতেন, তাদের প্রত্যেককে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা করে দিতেন।