সীমান্তে ৬৫ বছর পর ৭৫ বিঘা জমি উদ্ধার, আনন্দ

দীর্ঘ ৬৫ বছর ভারতের দখলে থাকার পর চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার বেণীপুর সীমান্তবর্তী ৭৫ বিঘা বাংলাদেশি জমি অবশেষে উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। গতকাল শনিবার দুপুরে ওই জমির পাশেই এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় বিজিবি। উদ্ধার করা জমিতে সাদা নিশান টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত ৬৫ বিঘা ও ব্যক্তিমালিকানাধীন ১০ বিঘা জমিতে প্রবেশের অধিকার ফিরে পাওয়ায় সীমান্তবর্তী মানুষের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি ৬ ব্যাটালিয়ন চুয়াডাঙ্গার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম মনিরুজ্জামান জানান, এলাকাবাসী, গণমাধ্যম ও প্রশাসনের মাধ্যমে অবগত হয়ে অপদখলীয় এ জমি উদ্ধারে গত প্রায় চার মাস আগে কাজ শুরু করে বিজিবি। প্রয়োজনীয় দলিলপত্র সংগ্রহের পর ভারতের সীমানগরের ১৭৩ বিএসএফ কমান্ড্যান্ট অনিল শর্মার সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখা হয়। অবশেষে গত ২৯ জুন জমিটি দখলে নেওয়া সম্ভব হয়। পরে আড়াই লাখ টাকা খরচ করে জমিটি চাষের উপযোগী করে তোলা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আবু সাঈদ জানান, উদ্ধার করা জমির মধ্যে ব্যক্তিমালিকানাধীন ১০ বিঘা জমি কাগজপত্র যাচাইয়ের পর প্রকৃত মালিককে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। বাকি ৬৫ বিঘা সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত। ওই জমিও শিগগিরই ভূমিহীনদের মাঝে বন্দোবস্ত দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বিজিবি-৬-এর অতিরিক্ত পরিচালক মেজর আনোয়ার জাহিদ, জীবননগর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আয়েশা সুলতানা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, সীমান্তের প্রধান খুঁটি ৬১/৩ এস থেকে ৬১/৯ এস পর্যন্ত ৭৫ বিঘা জমির আগাছা পরিষ্কার করে ট্রাক্টর দিয়ে চষে রাখা হয়েছে।
এ সময় গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিত্ব খোয়াজ বকশ জানান, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের আগে থেকেই ওই জমিতে নিম্নবর্ণের হিন্দু ও সাঁওতাল সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করত। দেশ ভাগের পর জমিটি তৎকালীন পাকিস্তানের অংশে পড়ে যাওয়ায় সেখানকার বাসিন্দারা ১৯৪৯ সালে ভারতে চলে যায়। সেই থেকে ভারত ওই জমি অপদখলীয় ভূমি হিসেবে দাবি করে ও নিজেদের দখলে রাখে।
কৃষক আবুল হোসেন বলেন, ৭৫ বিঘা জমির মধ্যে তিনি, আফজেল মণ্ডল, সাত্তার মণ্ডল, ফটিক মণ্ডল ও ওয়াছে মণ্ডল উত্তরাধিকার সূত্রে ১০ বিঘা জমির মালিক। কিন্তু এত দিন ওই জমিতে তাঁদের প্রবেশের অধিকার ছিল না। জমিতে প্রবেশ করলেই বিএসএফ ধরে নিয়ে যেত। এমনকি গরু-ছাগলও রেহাই পেত না। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর জমিতে প্রবেশের অধিকার পাওয়ায় বেশ আনন্দ লাগছে।’
বিজিবির কর্মকর্তারা জানান, জমিটি উদ্ধারের পর সেখানে অর্ধেক জমিতে ধঞ্চে ও বাকিটায় অড়হর ডালের বীজ বপন করা হয়েছে।