কমলগঞ্জে অবাধে হরিণ শিকার

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দি বন রেঞ্জের আদমপুর, কামারছড়া, রাজকান্দি বনাঞ্চলে অবাধে হরিণ শিকার করছে একটি চক্র। স্থানীয় লোকজন বলছেন, এক বছরে কমপক্ষে ২৩টি হরিণ শিকার করা হয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহলের এ কাজে মদদ দিচ্ছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, কমলগঞ্জের রাজকান্দি বন রেঞ্জের আদমপুর, কামারছড়া ও রাজকান্দি বন বিটের ভেতর রয়েছে মায়া হরিণসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণী। মায়া হরিণের নিরাপদ অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত এ বনে নজর পড়েছে হরিণ শিকারি ও খাদক চক্রের। স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতায় এলাকার চিহ্নিত হরিণ শিকারিরা বৈধ দোনলা বন্দুক নিয়ে প্রায়ই এসব সংরক্ষিত বনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁদের একটাই লক্ষ্য, মায়া হরিণ পেলেই গুলি।
স্থানীয় লোকজন জানান, কমলগঞ্জের চিৎলীয়া, জাঙ্গালীয়া, কালারায়বিল, কাঁঠালকান্দি ও কমলগঞ্জ উপজেলা সদর এবং মৌলভীবাজার জেলা সদরের কিছু বন্দুকধারী নিয়মিত শিকার করছেন এ বনের মায়া হরিণ। রক্ষা পাচ্ছে না হরিণশাবকগুলোও। শিকারি চক্রটি প্রতিটি হরিণ এলাকার বাইরে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে। অধিকাংশ হরিণ শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার ও সিলেট শহরের পাঁচতারা হোটেল ও ভিআইপিদের বাসায় চলে যায়। কোনো কোনো সময় ভাগ-বাঁটোয়ারা করে ভূরিভোজ করেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
গত ২৪ মার্চ রাতে হরিণ শিকারের জন্য আদমপুর বন বিটে প্রবেশ করে একদল শিকারি। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বনকর্মীরা তাদের ধাওয়া করলে শিকারি চক্রটি বাগানের লম্বাটিলা নামক স্থানে একটি বন্দুক ফেলে পালিয়ে যায়। পরদিন এ ঘটনায় কমলগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করে বন বিভাগ। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে আদমপুর বন বিট এলাকা থেকে বড় একটি মায়া হরিণ শিকার করে কাঁঠালকান্দি গ্রামের মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে একদল শিকারি। গভীর বনে মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে শিকার করা বড় একটি মায়া হরিণ তাঁর দুই ছেলে সোয়াইব হোসেন ও সোয়েব হোসেন বাড়িতে নিয়ে আসে। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে বন বিভাগ জানলেও রহস্যজনক কারণে নীরব ভূমিকা পালন করে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মোহাম্মদ হোসেন বলেন, বনের মায়া হরিণ শিকারে তিনি বা তাঁর পরিবারের কেউ জড়িত নন। হরিণ শিকার করে বাড়িতে নিয়ে আসার ছবি দেখানোর পর তিনি একটি হরিণ শিকার করার কথা স্বীকার করেন। এরপর তিনি বলেন, বন থেকে নিয়মিতই শিকার করা হচ্ছে হরিণ। প্রতি মাসে কমপক্ষে একটি হরিণ মারা হয়। কোনো কোনো মাসে দু-তিনটি হরিণ শিকার করা হয়ে থাকে।
কমলগঞ্জের রাজকান্দি বন রেঞ্জ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘চতুর শিকারিরা মাঝেমধ্যে মায়া হরিণ শিকার করছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। তবে সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসী বন বিভাগকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেন না বলেই শিকারিদের ধরা যাচ্ছে না। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলাও করা যাচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, স্বল্প জনবল নিয়ে বনাঞ্চল পাহারা দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. দেলওয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।