কলেজগুলোতে ছাত্রলীগের 'ভর্তি-বাণিজ্য'

রাজধানীর সরকারি কলেজগুলোতে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ছাত্রলীগের অনেক নেতা-কর্মী টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পছন্দের প্রার্থীদের ভর্তি না করায় একটি কলেজে ভাঙচুরও করেছেন তাঁরা। অনেক ক্ষেত্রে মেধাতালিকা ছাড়াই পছন্দের প্রার্থীদের ভর্তি করাতে কলেজ কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করছেন ছাত্রলীগের নেতারা।
রাজধানীর কবি নজরুল সরকারি কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, ঢাকা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ও সরকারি বাঙলা কলেজে সরেজমিনে ঘুরে এই অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে পুরান ঢাকার কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজে সমস্যা সবচেয়ে বেশি।
ভর্তি-বাণিজ্য সম্পর্কে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যদি কেউ ভর্তি-বাণিজ্য করে থাকে, তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে কলেজ প্রশাসনকে তাদের বিরুদ্ধে একাডেমিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করব।’
অবশ্য ‘পুরান ঢাকার দুই কলেজ: ছাত্রলীগকে টাকা দিলে ভর্তি মেলে!’ শিরোনামে গত বছরের ৪ জুলাই প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। তাতেও একই মন্তব্য করেছিলেন বদিউজ্জামান, কিন্তু ভর্তি-বাণিজ্য বন্ধ হয়নি।
কবি নজরুল সরকারি কলেজ: ৩ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেল, কলেজের প্রধান ফটকের সামনে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে টাকা লেনদেনের মধ্যস্থতা করছেন ছাত্রলীগের একাধিক কর্মী। যাদের সঙ্গে বনিবনা হচ্ছে তাদের ফরম দিয়ে ভর্তি কমিটির দপ্তরে পাঠানো হচ্ছে। ওই দপ্তরে কাগজপত্র নিয়ে ঘোরাঘুরি করছেন ছাত্রলীগের সভাপতি মামুনুর রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক রকিবুজ্জামান।
এ বিষয়ে রকিবুজ্জামান বলেন, ‘ব্যক্তিগত কাজে ওই দপ্তরে গিয়েছিলাম। আর ভর্তি-সংক্রান্ত কাজে জড়িত নয় ছাত্রলীগ।’
তবে মেধাতালিকায় না থেকেও ভর্তি হয়েছে আলমগীর হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী। সে বলে, ‘ভর্তির জন্য দুই দিন ধরে বড় ভাইদের পেছনে ঘুরছি। পরে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে ফরম পাইছি।’
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে গড়ে ২০ হাজার টাকা করে নিচ্ছে ছাত্রলীগ।
সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ: সোহরাওয়ার্দী কলেজে প্রকাশ্যেই টাকা নিচ্ছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী সারোয়ার হোসেন ওরফে বাবু। তিনি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কামরুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক কাউছার হক।
সরেজমিনে দেখা যায়, কলেজের ‘ছাত্র সংসদের’ বাইরে ফরম নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। সংসদের ভেতরে বিভিন্ন অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ফরম দিচ্ছেন বাবু। অন্যদিকে অলস সময় কাটাচ্ছেন ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক। ভর্তিসংশ্লিষ্ট কোনো বিজ্ঞপ্তি ওই কমিটির দপ্তরে দেখা যায়নি। এক ছাত্র জানায়, মেধাতালিকায় তার অবস্থান পাঁচ হাজারেরও পেছনে। তাই ২৫ হাজার টাকা খরচ করেছে। পরে ফরম দিয়েছে ছাত্রলীগ।
ঢাকা কলেজ: পছন্দের ছাত্রদের ভর্তি না করানোয় গত ২৬ জুন কলেজে ভাঙচুর করেছেন ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির নেতা-কর্মীরা।
অভিযোগ রয়েছে, ওই কমিটির সভাপতি ফুয়াদ হাসান ও সাধারণ সম্পাদক সাকিব হাসান ছাড়াও সহসভাপতি সাগর সাহা ও সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম চয়ন, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুল আজিজসহ তাঁদের অনুসারীরা এ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত।
২৩ জুন থেকে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয়। ২৬ জুন অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তির শেষ দিন ছিল। ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কলেজে গিয়ে দেখা যায়, ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থীদের কয়েকজনের সঙ্গে প্রশাসনিক ভবনের সামনে কথা বলছেন ছাত্রলীগের জুনিয়র কয়েকজন কর্মী। তাঁরা ‘বড় ভাই’য়ের কথা বলে শিক্ষার্থীদের কাছে টাকা চাইছেন। বলছেন, টাকা দিলে রোল যত পেছনেই থাক, ভর্তি করানো যাবে।
এ ছাড়া বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ও সরকারি বাঙলা কলেজে অর্থের বিনিময়ে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা ভর্তি-বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।