কক্সবাজারে জাল নোটের ছড়াছড়ি

ঈদ সামনে রেখে কক্সবাজারের বিভিন্ন হাটবাজারে ১০০০, ৫০০ ও ১০০ টাকার জাল নোটের ছড়াছড়ি চলছে। আসল-নকল বুঝতে না পেরে সাধারণ মানুষ প্রতারিত হচ্ছেন। নকল টাকায় মালামাল বিক্রি করে বিক্রেতারা সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। নকল টাকাসহ পাচারকারীরা ধরা পড়লেও মূল হোতারা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
গতকাল শনিবার দুপুরে শহরের পৌরভবনের সামনে কবুতর বিক্রি করতে আসেন রামুর জোয়ারিয়ানালা গ্রামের বৃদ্ধ আমান উল্লাহ। এক যুবক ৮০০ টাকায় চারটি কবুতর কিনে ১০০০ টাকার একটি নতুন নোট ধরিয়ে দেন। নোটটি পকেটে নিয়ে বৃদ্ধ যুবকটিকে ২০০ টাকা ফেরত দেন। এরপর বৃদ্ধ ওই ১০০০ টাকার নোটটি নিয়ে যান শহরের নিউমার্কেটে। শাড়ি কিনতে গিয়ে বৃদ্ধ জানতে পারেন ১০০০ টাকার নোটটি নকল।
বৃদ্ধ বলেন, ‘গৃহপালিত কবুতর বিক্রি করেছিলাম ছেলেমেয়েদের ঈদের নতুন জামাকাপড় কিনতে। কিন্তু প্রতারক চক্র সে ইচ্ছা পূরণ করতে দিল না। এর বিচার আল্লাহ করবেন।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, শহরের হাসপাতাল সড়ক, লালদীঘিরপাড়, পানবাজার সড়ক, ঝাউতলা, বাজারঘাটাসহ বিভিন্ন বিপণিকেন্দ্রে প্রায় প্রতিদিন জাল নোট নিয়ে কেনাকাটা করতে এসে নারী-পুরুষেরা ধরা পড়ছেন। কিন্তু পুলিশি ঝামেলার কারণে এ নিয়ে খুব একটা হইচই করা হয় না।
জেলা দোকানমালিক সমিতির সভাপতি মোস্তাক আহমদ বলেন, ঈদ সামনে রেখে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র বাজারে ১০০০, ৫০০ ও ১০০ টাকার জাল নোট ছড়াচ্ছে। ক্রেতা সেজে বেকার যুবক ও নারীরা জাল নোট ঈদের বাজারে ছড়িয়ে দিচ্ছে। জাল নোট শনাক্তকরণের কোনো মেশিন না থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।
রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইকুল আহম্মেদ বলেন, গত ১৬ জুলাই উপজেলার চা-বাগান স্টেশন থেকে পুলিশ ৫০০ টাকার সাতটি জাল নোটসহ আবদুল কাদের (২৫) নামের এক পাচারকারীকে আটক করে।
একই দিন বিকেলে পার্শ্ববর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের সিনামহল গ্রাম থেকে পুলিশ ১০০০ টাকার পাঁচটি জাল নোটসহ চকরিয়ার ফেরদৌসকে (২২) আটক করে। এরপর ফেরদৌসের স্বীকারোক্তি মতে পুলিশ স্থানীয় বার্মাইয়াপাড়ায় অভিযান চালিয়ে ১০০০ টাকার আরও ৬২টি জাল নোটসহ আবদুস সালামকে আটক করে।
ফেরদৌস ও আবদুস সালাম বলেন, ৫০ শতাংশ কমিশনে তারা জাল ১০০০, ৫০০ ও ১০০ টাকার নোট কিনে দুর্গম এলাকায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন। টেকনাফ, উখিয়া, চকরিয়া, কক্সবাজার শহরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে জাল নোট বিক্রির শতাধিক এজেন্ট রয়েছে। কিন্তু তাঁরা এজেন্টদের নাম-পরিচয় জানেন না।
নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ঈদ সামনে রেখে ইয়াবা ও জাল নোট পাচারকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমদ বলেন, কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসল টাকার আদলে জাল নোট তৈরি হচ্ছে। জাল নোটের সার্বিক ব্যবস্থাপনা এত নিখুঁত যে আসল-নকল শনাক্ত করাও মুশকিল। এখন বিপণিকেন্দ্রগুলোতে গোয়েন্দা পুলিশের নজরদারি বাড়িয়ে জাল নোট পাচারকারীদের ধরার চেষ্টা চলছে।