১৭ বছর পর রেলগাড়ি ঝমাঝম

প্রায় দুই যুগ পর গতকাল দুপুর ১২টায় রাজবাড়ী থেকে ফরিদপুর স্টেশনে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরু হয়। দীর্ঘ বিরতির পর ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় এ নিয়ে আগ্রহের কমতি ছিল না স্থানীয় মানুষের l প্রথম আলো
প্রায় দুই যুগ পর গতকাল দুপুর ১২টায় রাজবাড়ী থেকে ফরিদপুর স্টেশনে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরু হয়। দীর্ঘ বিরতির পর ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় এ নিয়ে আগ্রহের কমতি ছিল না স্থানীয় মানুষের l প্রথম আলো

প্রায় ১৭ বছর পর রাজবাড়ী-ফরিদপুর রেললাইনে গতকাল বৃহস্পতিবার পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচল করল। বেলা ১১টার দিকে রাজবাড়ী রেলস্টেশন থেকে পাঁচটি বগি নিয়ে একটি আন্তনগর ট্রেন ফরিদপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ট্রেনটি পাঁচুরিয়া, খানখানাপুর, বসন্তপুর, আমিরাবাদ, অম্বিকাপুর হয়ে দুপুর ১২টার দিকে ফরিদপুর শহরে পৌঁছায়।
ফরিদপুরে পৌঁছলে জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি হিসেবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইয়াহিয়া খান ট্রেনটিকে স্বাগত জানান। এ সময় রেললাইনের দুই পাশে দাঁড়িয়ে শত শত মানুষ করতালি দেন।
ফরিদপুর শহরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র রুমন (১৩) বাবার সঙ্গে এসেছিল ট্রেন দেখতে। রুমন জানায়, টেলিভিশনে ট্রেন দেখেছে সে। বাস্তবে দেখেনি। তাই বাবার সঙ্গে সকাল নয়টায় এখানে এসেছে। রুমনের সঙ্গে এসেছিল একই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সিহাব, গিয়াসসহ কয়েকজন। তারাও বাবা-চাচাদের কাছে শুনেছে, ফরিদপুরে একসময় ট্রেন চলাচল করত। কিন্তু কখনোই দেখেনি।
রাজবাড়ী থেকে মা ও চাচিকে সঙ্গে নিয়ে ট্রেনে চড়ে ফরিদপুরে এসেছেন রাজবাড়ী সরকারি কলেজের ছাত্র মো. এনামুল হাসান। তিনি বলেন, ‘অনেক বছর পর ট্রেনটি রাজবাড়ী থেকে সরাসরি ফরিদপুরে যাচ্ছে। মা ও চাচির আবদার পূরণ করতেই তাঁদের সঙ্গে নিয়ে ফরিদপুরে এলাম। খুবই ভালো লাগছে। মাত্র ২৫ মিনিটে এবং স্বল্প খরচে ট্রেনে আসা গেল। এখন থেকে যেকোনো প্রয়োজনেই ফরিদপুরে আসতে পারব।’

প্রায় দুই যুগ পর গতকাল দুপুর ১২টায় রাজবাড়ী থেকে ফরিদপুর স্টেশনে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরু হয়। দীর্ঘ বিরতির পর ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় এ নিয়ে আগ্রহের কমতি ছিল না স্থানীয় মানুষের। তাই তো ট্রেন আসতে দেরি হওয়ায় উৎসুক পিতা-পুত্র রেললাইনে কান পেতে ট্রেন আসার শব্দ শোনার চেষ্টা করছে l প্রথম আলো
প্রায় দুই যুগ পর গতকাল দুপুর ১২টায় রাজবাড়ী থেকে ফরিদপুর স্টেশনে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরু হয়। দীর্ঘ বিরতির পর ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় এ নিয়ে আগ্রহের কমতি ছিল না স্থানীয় মানুষের। তাই তো ট্রেন আসতে দেরি হওয়ায় উৎসুক পিতা-পুত্র রেললাইনে কান পেতে ট্রেন আসার শব্দ শোনার চেষ্টা করছে l প্রথম আলো


রেললাইনের পাশেই প্রায় ২২ বছর ধরে থাকা চা-দোকানি মতিয়ার মোল্যা (৪৫) বলেন, ‘ট্রেন বন্ধ হওয়ার পর থেকে আশায় ছিলাম, খুব শিগগির ট্রেন চালু হবে। তাই ব্যবসা মন্দা হলেও এ জায়গা ছেড়ে কোথাও যাইনি। আজ আবার নতুন করে ট্রেন চালু হওয়ায় কী যে আনন্দ লাগছে, তা ভাষায় বোঝাতে পারব না। দেখছেন না, দোকানে ভিড় শুরু হয়ে গেছে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালের জুলাইয়ে ফরিদপুর-রাজবাড়ী লাইনের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়। মাঝে দু-একবার ট্রেন এলেও ১৯৯৮ সালের ৫ মার্চ থেকে একেবারেই বন্ধ হয়ে যায় এই রেলপথ। পরে সরকারের সিদ্ধান্তে ২০১০ সালের ১০ মার্চ থেকে নতুন করে প্রায় ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে রেলপথ ও সাতটি রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। স্টেশনগুলো হলো রাজবাড়ী, পাঁচুরিয়া, খানখানাপুর, বসন্তপুর, আমিরাবাদ, অম্বিকাপুর ও ফরিদপুর।
রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. মাহবুবুল হক বখশি বলেন, ‘রাজবাড়ীর পাঁচুরিয়া থেকে ফরিদপুর শহরের দূরত্ব প্রায় ২৬ কিলোমিটার। সড়কের নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ম্যাক্স ইন্টারন্যাশনাল। আজ পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেনটি এলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উৎসাহ দিতেই আমি সঙ্গে এসেছি। ফরিদপুরে আসার পর স্থানীয় মানুষের উপস্থিতি দেখে আমি অভিভূত। ২০ আগস্ট থেকে নিয়মিত ট্রেন চলাচল করবে।’ প্রতিদিন সকাল আটটায় রাজবাড়ী থেকে ট্রেন ছেড়ে যাবে। দিনে প্রাথমিকভাবে একটি লোকাল ট্রেনই চলবে বলে তিনি জানান।
রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার হযরত আলী বলেন, ট্রেনটি রাজবাড়ী ও ফরিদপুর রেলস্টেশন ছাড়া শুধু পাঁচুরিয়া রেল জংশন এবং ফরিদপুরের আমিরাবাদ রেলস্টেশনে যাত্রী ওঠানামা করার জন্য থামানো হবে।