একমাত্র মাঠটি আবর্জনার ভাগাড়

নগরায়ণের ধকলে গত ১০ বছরে বগুড়া শহরের চিত্র এখন অনেকটাই ভিন্ন। গড়ে উঠেছে শত শত বহুতল ভবন। কিন্তু সে অনুযায়ী আধুনিকায়নের কোনো ছাপ পড়েনি নগরের পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়।
পরিচ্ছন্ন নগর গড়ে তোলা ও নগরবাসীর নাগরিকসুবিধা দেখভালের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকারের এ প্রতিষ্ঠানটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার চিত্র এতটাই নাজুক যে প্রতিষ্ঠানটি বগুড়া শহরের একমাত্র খেলার মাঠকেও আবর্জনার ভাগাড় বানিয়ে ছেড়েছে। এ ছাড়া দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক দালানকোঠার এ শহরে এখন ময়লা ও বর্জ্য সংগ্রহ করে তা ফেলা হচ্ছে যত্রতত্র। পাড়া-মহল্লা থেকে ময়লা-আবর্জনা এনে তা যেখানে-সেখানে জমা করায় পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি দুর্গন্ধে ব্যাহত হচ্ছে নগরবাসীর স্বাভাবিক জীবন।
বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু হিসেবে ঘোষণা করার পর শহরের খেলার মাঠ বলতে সাতমাথার অদূরে জ্বলেশ্বরীতলার আলতাফুন্নেছা মাঠটিই একমাত্র ভরসা। প্রতিদিন সকালে এ মাঠে খেলোয়াড়েরা অনুশীলন করেন। জাতীয় ও জেলা পর্যায়ের নানা খেলার আয়োজন হয় এ মাঠকে ঘিরেই। খেলার আয়োজন ছাড়াও এটি ঈদগাহ, রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ, কনসার্ট, মেলার কাজেও ব্যবহার করা হয়।
কিন্তু পৌরসভা এ মাঠেরই এক পাশে শহরের নানা প্রান্তের ময়লা-আবর্জনা এনে ফেলছে। বছরের পর বছর ‘বর্জ্য ড্যাম্পিংয়ের’ নামে একে আবর্জনার ভাগাড় হিসেবে ব্যবহার করছে। এতে মাঠের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। দুর্গন্ধে মাঠে বেশিক্ষণ থাকাও যায না।
ঐতিহ্যবাহী সোনালী অতীত ক্লাবের সভাপতি নুরুল বাশার চন্দনের অভিযোগ, ভাগাড় সরিয়ে নিতে খেলোয়াড়-ক্রীড়া সংগঠকদের পক্ষ থেকে আগে থেকেই দাবি জানানো হচ্ছে। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। একটা স্থায়ী সমাধানের জন্য নতুন করে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়েছে।
জ্বলেশ্বরীতলা এলাকার ব্যবসায়ী নেতা রেজাউল বারী বলেন, অভিজাত ও জনবহুল এ এলাকায় অনেক আবাসিক ভবন ছাড়াও নামীদামি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। খেলার মাঠের এ ময়লা-আবর্জনার কারণে গোটা এলাকার পরিবেশ নোংরা হচ্ছে।’
দীর্ঘদিনেও এ আবর্জনার ডাম্পিং সরিয়ে না নেওয়ায় খেলোয়াড়, ক্রীড়া সংগঠক, এলাকাবাসী একজোট হয়ে গত শুক্রবার মাঠের ওই অংশে প্রাচীর তুলে ময়লার ড্যাম্পিং সরিয়ে দেন। খবর পেয়ে পৌরসভার লোকজন পরের দিনই দুপুরে প্রাচীরটি ভাঙতে আসে। তবে এলাকাবাসীর তোপের মুখে পড়ে তাঁরা ফিরে যান।
সরেজমিন: শহরজুড়ে ছয়টি জায়গাকে বগুড়া পৌরসভা থেকে ময়লা-আবর্জনার ডাম্পিং স্পট করার কথা বলা হলেও বিভিন্ন স্থান ঘুরে এ রকম ১০-১২টি স্থান চোখে পড়েছে। এর মধ্যে আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠ, মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের সামনে, সেউজগাড়ি মিশন হাসপাতালের পেছনে, ফুলবাড়ী সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজের পাশে ও সিলিমপুরে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজসংলগ্ন মহাসড়কের পাশের ভাগাড় উল্লেখযোগ্য।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পৌরসভার মেয়র এ কে এম মাহবুবুর রহমান দাবি করেন, ‘শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আগের চেয়ে অনেক উন্নত। আগে মহল্লায়-মহল্লায় যত্রতত্র ডাস্টবিন ছিল। বাসা-বাড়ির ময়লা-আবর্জনা ডাস্টবিনের বাইরে ফেলা হতো। এখন ওই সব ডাস্টবিন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মহল্লাভিত্তিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির তদারকিতে ভ্যানে করে বাসাবাড়ি থেকে ময়লা-আবর্জনা এনে জড়ো করা হচ্ছে ছয়টি ড্যাম্পিং স্থানে। সেখান থেকে দিনের ময়লা দিনেই ট্রাকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হচ্ছে।’
মেয়র আরও বলেন, আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠ পৌরসভার। নিজস্ব জায়গা বলেই মাঠের একটি কোণ ময়লা-আবর্জনার ডাম্পিং স্থান হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেখানে মাত্র কয়েক ঘণ্টা ময়লা থাকে। খেলোয়াড় বা মাঠের কোনো সমস্যা হয় না।