সংখ্যালঘুর জমি দখল করতে সাজানো মামলা

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তির জমি দখলের উদ্দেশ্যে এক ব্যক্তিকে মারধর করে তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে উল্টো মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে এবং মামলার সাক্ষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মামলাটি সাজানো।
নড়িয়া থানার পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ঘরিষার ইউনিয়নের থিরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কাঠমিস্ত্রি ধীরেন বৈদ্যের (৬০) ৯৫ শতাংশ জমি রয়েছে। ১৯৮২ সালে ওই জমির ৬৪ শতাংশ সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে ‘ক’ তফসিলভুক্ত করা হয়। ওই বছরই একই গ্রামের জামসেদ হাওলাদার স্থানীয় ভূমি কার্যালয় থেকে ওই ৬৪ শতাংশ জমি ইজারা নেন। কিন্তু বিষয়টি গোপন রাখা হয়। ২০০৬ সালে ধীরেন বৈদ্য ঘটনাটি জানতে পারেন। এরপর ধীরেন আদালতে মামলা করেন। ২০১০ সালে আদালত ধীরেনের পক্ষে রায় দেন।
ধীরেনের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, ১ আগস্ট রাতে জামসেদের ছেলে রাজীব হাওলাদারের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা ধীরেনের বাড়িতে হামলা করে। হামলাকারীরা ধীরেনকে ব্যাপক মারধর করে। এরপর ১২ আগস্ট রাজীব হাওলাদার শরীয়তপুর বিচারিক হাকিম আদালতে তাঁর একটি মুদির দোকানে লুটপাট ও চাঁদা দাবি করার অভিযোগ এনে ধীরেনের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেন। মামলাটি নড়িয়া থানার পুলিশ তদন্ত করছে। ওই মামলায় ধীরেন বৈদ্য, তাঁর দুই ছেলে, দুই ভাই ও ভাইদের তিন ছেলেকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার আরজিতে বলা হয়, ধীরেন বৈদ্যর বাড়ির কাছে রাজীবের একটি মুদি দোকান ছিল। ১০ আগস্ট আসামিরা ওই দোকানে থাকা মালামাল লুট করেন এবং তাঁর কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন।
সরেজমিনে জানা গেছে, থিরপাড়া গ্রামে রাজীব হাওলাদারের কোনো মুদি দোকান কখনোই ছিল না।
রাজীবের মামলার সাক্ষীদের কাছে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তাঁরা জানান, ঘটনা সম্পর্কে তাঁরা কিছুই জানেন না। তাঁরা যে সাক্ষী, তা-ও জানেন না।
সাক্ষী মোস্তফা মোল্যা বলেন, ‘রাজীব হাওলাদারদের সঙ্গে ধীরেন বৈদ্যদের একটি বিরোধের কথা জানি। কিন্তু রাজীব হাওলাদারের কোনো মুদি দোকান নেই। মামলায় কেন আমাকে সাক্ষী করা হয়েছে, তা-ও জানি না।’
এ ব্যাপারে রাজীব হাওলাদার দাবি করেন, ‘আমাদের ইজারা নেওয়া ৬৪ শতাংশ জায়গা ধীরেন বৈদ্য দখলে রেখেছেন। তাঁরা আমার মুদিখানা দোকানে লুটপাট চালিয়েছেন।’ ওই গ্রামে তো আপনার কোনো মুদি দোকান ছিল না, এমন তথ্য জানালে তিনি মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দেন। এরপর আর তিনি ফোন ধরেননি।
ধীরেন বৈদ্য বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। পৈতৃক সম্পত্তিতে সন্তান ও ভাইদের নিয়ে বসবাস করছি। জামসেদ হাওলাদারের সন্তানেরা দীর্ঘদিন থেকে আমার জায়গাটি দখল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাঁরা আমাদের উচ্ছেদ করতে পরিবারের সবার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে। তাদের ভয়ে আমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছি।’
নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ কবিরুল ইসলাম জানান, মামলার তদন্ত শেষে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।