পুলিশের ভুলে কারাবাস!

জসিম উদ্দিন। পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক। চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার দরবেশহাট এলাকার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের খাতায় কোনো মামলা নেই। শুধু নামের মিল থাকার কারণে গ্রেপ্তারি পরোয়ানামূলে লোহাগাড়া থানার পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের ভুলে আট দিন ধরে বিনা দোষে কারাবাস করছেন জসিম উদ্দিন। 
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ছগির মিয়া বলেন, ‘যৌতুকের মামলায় কারাগারে আটক জসিম এই মামলার আসামি নন বলে আমাদের জানিয়েছেন। তাঁর মুক্তির বিষয়টি আদালতকে জানানো হয়েছে।’
লোহাগাড়া থানার পরিদর্শক তদন্ত কেফায়েত উল্লাহ গতকাল রোববার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘লোহাগাড়া থানার একটি যৌতুকের মামলায় আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এই মামলার আসামির নাম জসিম উদ্দিন। বাবার নাম আবুল কাশেম। কিন্তু গ্রেপ্তার হওয়ার পর আবুল হোসেনের ছেলে জসিম উদ্দিন আমাদের বলেননি তিনি এই মামলার আসামি নন। পরে আদালত থেকে প্রতিবেদন চাইলে জসিম উদ্দিন এই মামলার আসামি নন বলে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে রোববার (গতকাল)।’
জানতে চাইলে জসিম উদ্দিন জানান, পুলিশ তাঁকে রাস্তা থেকে জোর করে ধরে থানায় নিয়ে আসে। তাঁর কাছ থেকে কিছুই শুনতে চায়নি। মারধরের ভয়ে পুলিশের সঙ্গে বাড়াবাড়ি করেননি।
জসিমের স্ত্রী নাসিমা আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী যা আয় করত, তা দিয়ে সংসার চলত। চার সন্তান নিয়ে এখন আমরা না খেয়ে আছি। আর আমার স্বামীর বিরুদ্ধে আমি কোনো যৌতুকের মামলাও করিনি।’
কারা ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, লোহাগাড়া উপজেলার পারভীন আক্তার নামের এক নারী গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে তাঁর স্বামী জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি যৌতুকের মামলা দায়ের করেন। পরে আদালত বিচার বিভাগীয় তদন্ত দিলে জসিমের বিরুদ্ধে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে গত ২৪ এপ্রিল প্রতিবেদন দেওয়া হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক আসামি আবুল কাশেমের ছেলে জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
এই পরোয়ানামূলে লোহাগাড়া থানার এএসআই শেহাব উদ্দিন সেলিম গত ৩১ আগস্ট লোহাগাড়ার আবুল হোসেনের ছেলে জসিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠান। পরে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এদিকে মামলার প্রকৃত আসামি আবুল কাশেমের ছেলে জসিম উদ্দিন এলাকায় ঘোরাফেরা করলে মামলার বাদী পারভীন আক্তার ২ সেপ্টেম্বর আদালতকে লিখিতভাবে জানান, গ্রেপ্তার হওয়া আসামি জসিম উদ্দিন তাঁর মামলার আসামি নন। তাঁকে এই মামলা থেকে মুক্তি দিয়ে প্রকৃত আসামিকে গ্রেপ্তার করা হোক।
চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি এম এ নাছের চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নামের মিল থাকার কারণে পুলিশ ভুলে এক জসিমের স্থলে আরেক জসিমকে গ্রেপ্তার করেছে। মামলার বাদীই শনাক্ত করেছেন, গ্রেপ্তার জসিম এই মামলার আসামি নন। কাল (আজ) সোমবার বাদী ও বিনা দোষে কারাভোগকারী জসিমের উপস্থিতিতে আদালত শুনানি করে আদেশ দেবেন।’