৬৫টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙা হয়নি

সাত বছর আগে রাজশাহী শহরের ৭৮টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল। সামান্য ভূমিকম্পেই এগুলো ভেঙে পড়তে পারে—এমন আশঙ্কায় রাজশাহী সিটি করপোরেশন, গণপূর্ত অধিদপ্তর (পিডব্লিউডি) ও রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে এই তালিকা করেছিল। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এখনো সেগুলো ভাঙা হয়নি।সাভার ট্র্যাজেডির পর আবারও নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। সম্প্রতি ৬৫টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মালিককে সিটি করপোরেশন নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ৫ মে সিটি করপোরেশন এই সিদ্ধান্ত নেয়।বহুতল ভবনের ব্যাপারে সরকারিভাবে নির্মিত ভবনগুলোর বিধি না মানার যে অভিযোগ রয়েছে, ব্যক্তিপর্যায়ে নির্মিত ভবনগুলোর ক্ষেত্রে সেই অভিযোগ নেই। তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা যায়, ২০০৫-০৬ সালে তদন্ত করে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা করে কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে তারা বলেছিল, মাঝারি ধরনের অর্থাৎ রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৫ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হলে এই ভবনগুলো ভেঙে পড়তে পারে।রাজশাহী সিটি করপোরেশনের হিসাবমতে, নগরে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ ৭৮টি ভবন রয়েছে। এর মধ্যে ৫৪টি ভবনের তালিকা করেছে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ), ১৮টি ভবনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজশাহী সিটি করপোরেশনের কাছে বিভিন্ন ব্যক্তি আবেদন করেছেন এবং তদন্তকালে তারা আরও ছয়টি ভবন চিহ্নিত করেছে। এই ৭৮টি ভবনের মধ্যে ৬৫টি পুরোপুরি ঝুঁকিপূর্ণ, দুটি আংশিক ঝুঁকিপূর্ণ, আটটি মেরামতযোগ্য ও তিনটি নির্মাণাধীন ছিল।আরডিএর তালিকাভুক্ত ৫৪টি ভবনের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিমালিকানাধীন বাসগৃহ। এর মধ্যে মাত্র কয়েকটি ভবন নগরের সড়ক সম্প্রসারণের কারণে ভেঙে ফেলা হয়েছে। ২০০৮ সালের ২৬ জুন বোয়ালিয়া থানার মোড়ে একটি বাড়ি ধসে পড়ে। ২৬ জুলাই দিবাগত রাতে ভূমিকম্পের সময় নগরের মিঞাপাড়া এলাকার একটি পুরোনো বাড়ি ধসে পড়ে। ২৮ জুলাই রাতে নগরের সিপাইপাড়া এলাকার মহিলা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের এ রকম একটি দোতলা ভবনের আংশিক ধসে পড়ে।

জানা গেছে, নগরের মানিক জুয়েলার্সের মালিক তাঁর ভবনটি ভাঙার জন্য সিটি করপোরেশনকে ১৯৯৯ সালে এক লাখ ১১ হাজার ১৫৭ টাকা জমা দিয়েছেন। মালিক অশোক কুমার রায় জানান, টাকা জমা দেওয়ার পরও তারা ভাঙার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। অবশেষে তিনি টাকা ফেরত চেয়ে আবেদন করেছেন। তারা তা-ও ফেরত দেয়নি। মানিক জুয়েলার্সের ছাদের ওপর উঠলে দেখা যায়, এর এক পাশের ছাদ ভেঙে পড়েছে। বাকি অংশও নিচের দিকে বসে গেছে। এর ভেতরেই চলছে তাদের ব্যবসা। একই সঙ্গে পরিবার-পরিজন নিয়েও বসবাস করছেন অনেকে। সম্প্রতি নগরে বেশ কিছু বহুতল ভবন নির্মিত হয়েছে।

আরডিএর অথরাইজড অফিসার আবুল কালাম আজাদ জানান, নগরে ব্যক্তিপর্যায়ে ১৬টি বহুতল ভবনের নকশা অনুমোদন করা হয়েছে। এর মধ্যে আটটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলো এখানো শেষ হয়নি। এর মধ্যে কয়েকটির নির্মাণত্রুটি রয়েছে। সেগুলোর মালিককে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আর তিন-চারতলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে হয়তো ঠিকমতো নকশা অনুমোদন করা হয়নি। সেগুলো তেমন ঝুঁকিপূর্ণও নয়। তিনি আরও জানান, বেশ কয়েকটি সরকারি ভবনই ঠিকমতো নকশা অনুমোদন করে নির্মাণ করা হচ্ছে না।

rajshahi
rajshahi

 রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক জানান, ৭৮টি ভবন ভাঙার বিষয় সেই সময় সাধারণ সভায় উঠেছিল। তখন আলোচনা হয়েছিল, ভবনমালিক নিজ থেকে ভবন না ভাঙলে সিটি করপোরেশন নিজ দায়িত্বে সেই ভবন সরিয়ে নেবে। তার খরচ ভবনমালিককে বহন করতে হবে। কিন্তু পরে আর সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়নি। সাভার ট্র্যাজেডির পর ৫ মে আবার বৈঠক করে ৬৫টি ভবনের মালিককে নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।