আমাকে গ্রেপ্তারের আগে নিজের পথ পরিষ্কার করুন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গতকাল সমাবেশে বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গতকাল সমাবেশে বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, তিনি গ্রেপ্তার বা জেলখানাকে ভয় পান না। তবে তাঁকে গ্রেপ্তারের পরিণতি ভেবে দেখার জন্য পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন, ‘আমাকে গ্রেপ্তারের আগে আপনারা নিজেদের পথ পরিষ্কার করে রাখেন। পাসপোর্টে ভিসাসহ যা যা লাগে নিয়ে রাখেন। তা না হলে পালানোর পথ পাবেন না।’

গতকাল মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের নিয়াজ মুহাম্মদ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট আয়োজিত সমাবেশে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এখনই পথ পরিষ্কার করতে না পারলে দেশের জনগণ, আলেম-ওলামারা পথ আটকে দেবে। তখন আর পালানোর পথ পাবেন না।

প্রসঙ্গত, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা দুটি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়েছে। এর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাৎসংক্রান্ত মামলায় গত সোমবার খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। এ মামলায় তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমানও আসামি। এ ছাড়া গত শনিবার রাতে গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের এক যৌথ সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, নৈরাজ্যের চেষ্টা হলে প্রয়োজনে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হবে।

এর প্রেক্ষাপটে খালেদা জিয়া গতকাল জনসভায় সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘আমাকে গ্রেপ্তারের পর কী হবে, তা চিন্তা করে রাখুন। আপনারা কীভাবে থাকবেন?’ তিনি বলেন, এই সরকারের খুন, গুম ও দুর্নীতির সমস্ত তথ্য-প্রমাণ আছে। এগুলো প্রকাশ করা হলে তাদের কী হবে? তাদেরও জেলে যেতে হবে। শাস্তি পেতে হবে।

বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, শেখ হাসিনাও বহু অপরাধ করেছেন। তিনি পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে
হত্যাযজ্ঞের কথা উল্লেখ করে বলেন, ওই ঘটনার কয়েক দিন আগেই শেখ হাসিনা সুধা সদন থেকে মিন্টো রোডে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ওঠেন। পরে আবার সেখান থেকে চলে যান গণভবনে। মাঝে অল্প সময়ের জন্য তাঁর যমুনায় ওঠা প্রমাণ করে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছু জানতেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের নিয়াজ মুহাম্মদ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে গতকাল ২০–দলীয় জোট আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া l ছবি: প্রথম আলো
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের নিয়াজ মুহাম্মদ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে গতকাল ২০–দলীয় জোট আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া l ছবি: প্রথম আলো

খালেদা জিয়া বলেন, শেখ হাসিনাকে নাকি কেনা যায় না। তাঁকে কেনা যায়। তিনি ১৯৮৬ সালে এরশাদের কাছে বিক্রি হয়েছিলেন। টাকার বিনিময়ে এরশাদের অধীনে ওই নির্বাচনে গিয়েছিলেন।

খালেদা জিয়া তাঁর সরকারের আমলে গঠিত র‌্যাব বাতিলের দাবি করে বলেন, ‘র‌্যাব পচে গেছে, গ্যাংগ্রিন হয়ে গেছে। এটাকে ফেলে দিতে হবে। বাতিল করতে হবে।’ তিনি অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনা সরকার আমলে র‍্যাব বিএনপির ৩১০ জনকে হত্যা ও ৫৬ জনকে গুম করেছে। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব হত্যার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জড়িত। র‌্যাব জড়িত।

খালেদা জিয়া র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসানকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। তিনি বলেন, জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না, কেননা তাঁকে জেরা করলে অনেক খুনের কথা বের হয়ে আসবে। সরকার এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে হাত লাগাচ্ছে না। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কর্নেল জিয়া কীভাবে এখনো পদে থাকেন। তাঁকে জেলে নিয়ে বিচার করতে হবে।

গুম-খুনের বিরুদ্ধে জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান ২০-দলীয় জোটের নেত্রী।। তিনি বলেন, ঈদের পর যে কর্মসূচি দেওয়া হবে, তা পালনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে নিতে সংবিধানের সংশোধনীর প্রতিবাদ জানান খালেদা জিয়া। তিনি এই সংশোধনী বাতিলের দাবি করেন। তিনি বলেন, বিচারপতিদের ভয় দেখিয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার রায় নিজেদের মতো করে নিতে এই সংশোধন করা হয়েছে। এই সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতিদের হাত-পা বেঁধে ফেলা হয়েছে।

 বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, এমনিতেই বিচার বিভাগ পুরোপুরি স্বাধীন না। এখন তারা যেভাবে চাইবে, সেভাবে রায় দিতে হবে। নয়তো বিচারপতিদের অপসারণ করা হবে। তিনি বলেন, এই সংশোধনীর বিরুদ্ধে এক দিন হরতাল দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জনসভার আয়োজন করে ২০-দলীয় জোট। এতে সভাপতিত্ব করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর বিএনপির সভাপতি শফিকুল ইসলাম। আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান, খেলাফত মজলিসের সভাপতি মো. ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের সভাপতি আবদুল লতিফ নেজামী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) সভাপতি আন্দালিব রহমানসহ ২০-দলীয় জোটের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।

জনসভায় বিএনপিসহ জোটের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীর উপস্থিতি ছিল। খালেদা জিয়ার আগমন উপল‌ক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের প্রতিটি প্রবেশপথে তোরণ নির্মাণ করা হয়। জনসভার কারণে দুপুর ১২টা থেকে কুমিল্লা-সিলেট সড়কের সরাইল বিশ্বরোড মোড় থেকে শহরের কাউতলী মোড় পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়।

ঢাকা থেকে যাত্রাপথে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, নরসিংদীর বেলাব, সদর ও ভৈরবসহ বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা সড়কের পাশে জড়ো হয়ে দলীয় নেত্রীকে স্বাগত জানান। জনসভা শেষে রাতেই খালেদা জিয়া ঢাকায় ফেরেন। তিনি ২৭ সেপ্টেম্বর জামালপুরে জনসভায় ভাষণ দেবেন।