দুদকের তদন্তেও ভবন নির্মাণে অনিয়মের সত্যতা মিলল

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার ছাবেরা খাতুন শিশুসদনের পাঁচতলা দুটি ডরমিটরি ভবন ও চারতলা একটি স্কুল কাম প্রশিক্ষণকেন্দ্র নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগের আবারও সত্যতা মিলেছে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর নতুন করে এ তদন্ত হয়েছে। এবার তদন্ত করল দুদক।
এর আগে শিশুসদনের সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদলের তদন্তেও অনিয়মের সত্যতা পাওয়া যায়।
গত বছরের ১৪ জুন প্রথম আলোয় ‘হস্তান্তরের আগেই ঠিকাদারের বিল পরিশোধ: শিশুসদনের ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এরপর শিশুসদনের সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গত বছর ২২ অক্টোবর আদালতে মামলা করেন। একই বছরের ২৮ অক্টোবর মামলাটি তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
দুদক রংপুর সমন্বিত কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক আকবর আলী সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, দুদকের পক্ষ থেকে ঘটনা তদন্তে রংপুর গণপূর্ত কার্যালয়ের চারজন প্রকৌশলীর সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি ২৮ সেপ্টেম্বর তদন্ত করেছে। তদন্ত প্রতিবেদন এখনো হাতে পাওয়া যায়নি।
তদন্ত কমিটির প্রধান রংপুর গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, নকশা অনুযায়ী ভবনগুলো নির্মিত হয়নি। পাঁচতলা ভবন দুটি প্রস্থে ৫৬ ফুট ৬ ইঞ্চি নির্মিত হওয়ার কথা থাকলেও ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি কম অর্থাৎ ৫০ ফুট পাওয়া গেছে। এ ছাড়া জলছাদের পুরুত্ব ৪ ইঞ্চির স্থলে ১ ইঞ্চি কম করে ৩ ইঞ্চি করা হয়েছে। অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র লাগানোর কথা থাকলেও তা লাগানো হয়নি। তা ছাড়া ১৫০টির মতো দরজার উপকরণ শীলকড়ই কাঠ দিয়ে তৈরি করার কথা থাকলেও তা অত্যন্ত নিম্নমানের কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। দরজাগুলো ইতিমধ্যে বাঁকা হয়ে গেছে। সরবরাহ করা ২৫০টি সিলিং ফ্যানের কোনো ব্র্যান্ডের নাম পাওয়া যায়নি। নিম্নমানের ৫৭টি সোলার প্যানেল সরবরাহ করা হলেও তা দিয়ে বৈদ্যুতিক পাখা চালানো সম্ভব হয়নি। শিগগিরই দুদকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
রংপুর সমাজসেবা কার্যালয় সূত্র জানায়, কাউনিয়া উপজেলার শহীদবাগ ইউনিয়নের বল্লভ বিশু গ্রামে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ২০১১ সালের ৪ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) রংপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রায় আট কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে পাঁচতলা দুটি ডরমিটরি ভবন এবং চারতলা একটি স্কুল কাম প্রশিক্ষণকেন্দ্র নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করেন। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কাজ শেষ করে হস্তান্তর করার কথা। কিন্তু নানা অনিয়মের কারণে গত বছর ১৪ মে ত্রুটিপূর্ণ ভবন হস্তান্তর করা হয়।