'পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব চাই'

মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছেন এ পি জে আবদুল কালাম। ছবি: প্রথম আলো
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছেন এ পি জে আবদুল কালাম। ছবি: প্রথম আলো

ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও মহাকাশবিজ্ঞানী এ পি জে আবদুল কালাম বলেছেন, পারমাণবিক শক্তি যখন মানবসভ্যতা ধ্বংসের জন্য ব্যবহার হয়, তা অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় ভারত, পাকিস্তানসহ সব দেশের একসঙ্গে কাজ করা উচিত।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে তরুণদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় পারমাণবিক শক্তির নেতিবাচক দিক সম্পর্কে এ অভিমত দেন আবদুল কালাম।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই) ১১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিসাইল ম্যান অব ইন্ডিয়া খ্যাত ভারতের একাদশ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়।
ঘণ্টা দেড়েকের মতবিনিময় অনুষ্ঠানে আবদুল কালাম ৪০ মিনিট বক্তব্য দেন। বক্তৃতাজুড়ে জীবনের স্মৃতিচারণার মধ্য দিয়ে তিনি তরুণদের উজ্জীবিত করেন। এ সময় তিনি উল্লেখ করেন, কবি জালালউদ্দিন রুমির কবিতা তাঁর মধ্যে বুনে দিয়েছিল স্বপ্নের বীজ। কবিতাটি তিনি তরুণদের ফের আবৃত্তি করে শোনান। এরপর তিনি অংশ নেন প্রশ্নোত্তর পর্বে।
মতবিনিময় অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন এমসিসিআইয়ের সভাপতি রোকেয়া আফজাল রহমান। এরপর ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতিকে পরিচয় করিয়ে দেন এমসিসিআইয়ের সদস্য তাবিদ এম আউয়াল। এ পি জে আবদুল কালামের বক্তৃতা আর প্রশ্নোত্তর পর্বের পর এমসিসিআইয়ের সহসভাপতির ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শেষ হয়।
পারমাণবিক শক্তির কারণে ভারত ও পাকিস্তানের বিরাজমান উত্তেজনাকে একজন পরমাণুবিজ্ঞানী হিসেবে কীভাবে দেখেন? জানতে চাইলে আবদুল কালাম বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে, পারমাণবিক শক্তি তখন অমঙ্গলের, যখন তা মানব উন্নয়নের সব ক্ষেত্র ধ্বংসের কাজে ব্যবহার করা হয়। আমি মনে করি, যেসব দেশের পরমাণু অস্ত্র রয়েছে তাদের জন্য নিরস্ত্রীকরণের সময় এসেছে। ২০২৫ সালের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ৩০ শতাংশ কমাতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা অত্যন্ত ইতিবাচক। তাই ভারত, পাকিস্তানসহ সব দেশের পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের পাশাপাশি পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় একসঙ্গে কাজ করা উচিত।’
তরুণদের জীবনের দর্শন কী হওয়া উচিত? জানতে চাইলে আবদুল কালাম বলেন, ‘আমি যা বলব তুমিও আমার সঙ্গে সঙ্গে তা উচ্চারণ করো। আমি অনেক বড় স্বপ্ন দেখব। ছোট লক্ষ্য থাকা অপরাধ। আমি অব্যাহতভাবে জ্ঞান আহরণ করে যাব। আমি সমস্যা সমাধানের অধিনায়ক হব। সমস্যার সমাধান করব। এভাবেই সফল হব। এটাই হবে আমার লক্ষ্য।’
গত বুধবার ছিল আবদুল কালামের ৮৩তম জন্মদিন। সঞ্চালক আইনুন নিশাত এ জন্য ভারতের রাষ্ট্রপতিকে জন্মদিনের বিলম্বিত শুভেচ্ছা জানান।
আইনুন নিশাত বলেন, বৈমানিক হওয়ার লক্ষ্য থাকলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচিত হতে পারেননি আবদুল কালাম। তবে এটাকে শাপে বর ধরা উচিত। কারণ সেটি ঘটলে পৃথিবী এমন একজন সফল বিজ্ঞানীকে পেত না।
বক্তৃতার শুরুতে আবদুল কালাম তিনটি বিষয়ের কারণে বাংলাদেশ নিয়ে তাঁর মুগ্ধতার কথা জানান। নদীমাতৃক বাংলাদেশের বিস্তৃত জলরাশি, তৈরি পোশাকশিল্পের সাফল্য আর বিপুল সংখ্যক তরুণ জনগোষ্ঠী তাঁকে আকৃষ্ট করেছে বলে তিনি জানান। এর পাশাপাশি ইতিহাস, শিল্প-সংস্কৃতি আর সম্পদে দুই দেশের নৈকট্য নিয়ে তিনি কথা বলেন।
এ পি জে আবদুল কালাম বলেন, বিপুল জনগোষ্ঠী মানে বিপুল স্বপ্ন। এর পাশাপাশি থাকে সমস্যাও। তবে সমস্যাকে পুঁজি করতে হবে। একে জয়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকে সাফল্যের সোপান। আর সফলতার জন্য বড় স্বপ্ন দেখা, জ্ঞান আহরণ আর কঠোর পরিশ্রম অপরিহার্য। তিনি জানান, প্রাথমিক স্কুলে পড়ার সময় তাঁর স্কুলশিক্ষক আয়ার পাখির ছবি এঁকেছিলেন। সেই থেকে তাঁর আকাশে উড়ার স্বপ্নের শুরু। বৈমানিক তিনি হতে পারেননি, তবে মহাকাশ জয় করেছেন।
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি জানান, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণে তিনি সফল হলেও বৈতরণি পার হওয়ার আগে তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন। আর ওই ব্যর্থতাই তাঁকে সফল হতে উজ্জীবিত করেছিল। তিনি বলেন, নিজের ব্যর্থতাকে দূর করে সফল হওয়ার পথ খুঁজে নিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন নেতৃত্ব গুণের ।
এ পি জে আবদুল কালাম বলেন, ‘সবাইকে অনেক বড় স্বপ্ন দেখতে হবে। ভাবতে হবে আমাকে যেন মানুষ মনে রাখবে। কিন্তু মানুষ কেন মনে রাখবে, সেটি ঠিক করতে হবে। বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সবাই তাঁকে মনে রেখেছে। এভাবেই সবাইকে স্বপ্ন দেখার পাশাপাশি তা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করতে হবে।’