কাঁচপুরে বিক্ষোভ, অপহৃতকে উদ্ধার

ঠিকাদারি ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধের জের ধরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে চারজনকে অপহরণের ঘটনায় নিখোঁজ একজনকে গতকাল সোমবার উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ফাঁসির দাবিতে গতকাল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেছেন ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীরা। থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে পুরো কাঁচপুর এলাকায়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হরিপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজের ঠিকাদারি ও ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গত রোববার উপজেলার কাঁচপুর ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামে চারজনকে অপহরণ করে সন্ত্রাসীরা। পরে দুজনের হাত-পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়। এর মধ্যে লিটন মিয়া (৩০) ওই দিনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। গুরুতর আহত ইসমাইল হোসেন ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এদিকে নিহত লিটনের বড় ভাই আফজাল হোসেনকে অপহরণকারীরা গতকাল ভোরে ছেড়ে দেয়। পরে তাঁকে উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের একটি পরিত্যক্ত ডোবা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি স্থানীয় একটি ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। সরেজমিনে দেখা যায়, বাজারের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ফাঁসির দাবিতে এলাকাবাসী বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করছেন।
লিটনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারে চলছে মাতম। পরিবারের সদস্যদের কান্না দেখে উপস্থিত গ্রামবাসীর অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। এ সময় লিটনের মা সাহারুন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘ঠিকাদারি ব্যবসার কারণেই কুতুবপুর গ্রামের সন্ত্রাসীরা আমার দুই ছেলেকে অপহরণ করেছে। এক ছেলেকে জীবিত পেলেও এক ছেলের লাশ পেলাম।’
লিটনের স্ত্রী হালিমা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীকে পরিবারের সদস্যদের সামনে থেকে অপহরণ করে রগ কেটে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। কাঁচপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি বজলুর রহমান ও ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম ডালিম, ছাত্রলীগ ক্যাডার ইমরান হোসেন, রাসেল মিয়া, সেলিম হোসেন ও শামিম মিয়ার নেতৃত্বে ২০-২৫ জন সন্ত্রাসীর নাম উল্লেখ করে আমি বাদী হয়ে হত্যা মামলা করব। বজলুর রহমানের বাড়িতে গোপনে সভা করে আমার স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করে সন্ত্রাসীরা।’
ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী হালিমা হোসেন বলেন, ‘আমার স্বামীর চেতনা এখনো ফেরেনি। তাঁর হাত-পা ভেঙে রগ কেটে দেওয়া হয়েছে।’
তবে ইসমাইলকে আহত করার ঘটনায় তাঁর মা দুধ মেহের বাদী হয়ে বন্দর থানায় বজলুর রহমান, বি এম ডালিম, ছাত্রলীগের রাসেল, শামিম মিয়া, মনির হোসেনসহ নয়জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন বন্দর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আসাদুজ্জামান।
এদিকে এ ঘটনায় গতকাল এলাকায় প্রচারপত্র ছেড়েছেন গ্রামবাসী। এতে উল্লেখ করা হয়, বজলুর রহমান ওরফে ডন বজলু এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। প্রকাশ্যে উপস্থিত থেকে তাঁর নেতৃত্বে অপহরণের পর এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। তাঁর বিরুদ্ধে থানায় হত্যাসহ ২০টি মামলা রয়েছে।
সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিজাউল হক জানান, ঘটনার দিন আটক নয়জন পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। লিটনের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যায় কুতুবপুর গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।