মীর কাসেমের বিরুদ্ধে মামলার রায় রোববার

মীর কাসেম আলী
মীর কাসেম আলী

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় আগামী রোববার ঘোষণা করবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এই মামলার কার্যক্রম শেষ হওয়ার প্রায় ছয় মাস পর গতকাল বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনাল-২ আদেশে বলেন, রোববার রায় ঘোষণা করা হবে।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে গঠিত এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম। তবে গতকাল এই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে বাকি দুই সদস্য রায় ঘোষণার এই দিন ধার্য করেন। ট্রাইব্যুনাল-১ গত বুধবার মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়ার পরদিন ট্রাইব্যুনাল-২ এই মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করলেন।
মীর কাসেমের বিরুদ্ধে মামলার রায় হবে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার ১১তম রায়। আগের ১০টির মধ্যে ট্রাইব্যুনাল-১ চারটি ও ট্রাইব্যুনাল-২ ছয়টি মামলার রায় দিয়েছেন।
মীর কাসেমের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। তাদের দাবি, অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার প্রতিটি অভিযোগ তারা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছে। পক্ষান্তরে আসামিপক্ষের দাবি, রাষ্ট্রপক্ষের কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। তাই তারা আশা করছে, মীর কাসেম খালাস পাবেন।
রাষ্ট্রপক্ষের দাখিল করা নথিপত্র অনুসারে, বর্তমানে ৬২ বছর বয়সী মীর কাসেমের পৈতৃক বাড়ি মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায়। তবে বাবার চাকরির সূত্রে তিনি ছোটবেলা থেকে চট্টগ্রামে থাকতেন। একাত্তরের ২৫ মার্চ থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি জামায়াতের তৎকালীন ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের (বর্তমান নাম ইসলামী ছাত্রশিবির) চট্টগ্রাম শহর শাখার সভাপতি ছিলেন। ৭ নভেম্বর তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক হন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৭ সালে ইসলামী ছাত্রসংঘ নাম বদলে ইসলামী ছাত্রশিবির নামে আত্মপ্রকাশ করে। মীর কাসেম ছিলেন ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ১৯৮০ সালে তিনি রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামী নামের একটি বিদেশি বেসরকারি সংস্থার এ দেশীয় পরিচালক হন। ১৯৮৫ সাল থেকে তিনি জামায়াতের শূরা সদস্য। দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান মীর কাসেম জামায়াতের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। জামায়াতের অর্থের সবচেয়ে বড় জোগানদাতাও তিনি।
২০১২ সালের ১৭ জুন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মীর কাসেমকে গ্রেপ্তার করে। গত বছরের ১৬ মে রাষ্ট্রপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। ৫ সেপ্টেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে ১৪টি অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল-১। পরে মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-২-এ স্থানান্তর করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে তদন্ত কর্মকর্তাসহ ২৪ জন ও আসামিপক্ষে তিনজন সাক্ষ্য দেন। ২৩ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। ৪ মে দুই পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়।

জামায়াতের টাকার জোগানদাতা
১৪ অভিযোগ: মীর কাসেমের বিরুদ্ধে গঠন করা ১৪টি অভিযোগের মধ্যে ১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগে অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ রয়েছে। বাকি ১২ অভিযোগ অপহরণ, আটক ও নির্যাতনের। ১১ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালে পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর যেকোনো দিন মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে চট্টগ্রাম শহরের অজ্ঞাত স্থান থেকে অপহরণ করে আলবদর সদস্যরা। পরে মীর কাসেমের নির্দেশে তাঁকে ডালিম হোটেল নির্যাতনকেন্দ্রে নিয়ে নির্যাতন ও ২৮ নভেম্বর হত্যা করা হয়। সেখানে নির্যাতনে নিহত আরও পাঁচজনের সঙ্গে জসিমের লাশ কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। ১২ নম্বর অভিযোগ অনুসারে, একাত্তরের নভেম্বরে মীর কাসেমের নির্দেশে আলবদর সদস্যরা চট্টগ্রামের হিন্দু-অধ্যুষিত হাজারী গলির বাসা থেকে রঞ্জিত দাস ও টুন্টু সেনকে অপহরণ করে ডালিম হোটেলে নিয়ে যায়। পরে তাঁদের হত্যা করে লাশ গুম করা হয়। এ ছাড়া পাকিস্তানি সেনা ও সহযোগী রাজাকার-আলবদররা হাজারী গলির ২৫০-৩০০ দোকান লুট ও অগ্নিসংযোগ করে।

মীর কাসেমের বিরুদ্ধে ১ থেকে ১০ নম্বর এবং ১৩ ও ১৪ নম্বর অভিযোগে ২৪ জনকে অপহরণের পর আটক ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ অনুসারে, ৮ নভেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের আগ পর্যন্ত চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে এই ২৪ জনকে অপহরণ করে ডালিম হোটেল, সালমা মঞ্জিল বা আছদগঞ্জের নির্যাতনকেন্দ্রে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের শিকার ২৪ জনের নাম এসব অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। মীর কাসেমের নেতৃত্বে ও নির্দেশে তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন আলবদর বাহিনী এসব অপহরণ ও নির্যাতন করে।