ঈদে বাড়তি আনন্দ আনে 'মাংস সমিতি'

টাঙ্গাইলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ‘মাংস সমিতি’। টাঙ্গাইল শহর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এ বছর হাজার খানেক এ ধরনের সমিতি গড়ে উঠেছে। সারা বছর একটু একটু সঞ্চয় করে ঈদের আগে পশু কিনে জবাই করে মাংস ভাগ করে নেন সমিতির সদস্যরা। এটি ঈদে তাঁদের বাড়তি আনন্দ দেয়, আর্থিক চাপ কমে যায়।

ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গ্রাম, পাড়া বা মহল্লায় এ ধরনের মাংস সমিতি গঠন করা হয়। সমিতির সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন এলাকার লোকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, আট-নয় বছর আগে দু-এক জায়গায় এ ধরনের সমিতি চালু হয়। পরে প্রতিবছর সমিতির সংখ্যা বাড়তে থাকে। এ বছর টাঙ্গাইলের বিভিন্ন এলাকায় সমিতির সংখ্যা হাজার খানেক হবে বলে তাঁরা জানিয়েছেন। এ ধরনের সমিতিতে সদস্যসংখ্যা ২০ থেকে ৫০ জন পর্যন্ত থাকেন। তাঁরা প্রত্যেকে প্রতি সপ্তাহে বা মাসে নির্ধারিত হারে চাঁদা জমা দেন। পরে জমা করা টাকায় ঈদের দু-এক দিন আগে গরু বা ছাগল কিনে এনে জবাই করে মাংস ভাগ করে নেন। ওই গরু বা ছাগলের চামড়া বিক্রির টাকা দিয়ে প্রাথমিক তহবিল করে শুরু হয় পরের বছরের জন্য সমিতির কার্যক্রম।

টাঙ্গাইল শহরের প্রতি পাড়া মহল্লা এবং সদর উপজেলার প্রতিটি গ্রামেই এ ধরনের সমিতি গঠন করা হয়। শুরুতে শুধু নিম্নবিত্তের লোকেরা এ ধরনের সমিতি করলেও এখন মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তরাও সমিতি করছেন।

টাঙ্গাইল শহরের বেড়াডোমা এলাকায় এ ধরনের একটি সমিতি গঠন করেছিলেন ওষুধ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান। তিনি জানান, তাঁদের সমিতিতে সদস্যসংখ্যা ছিল ২০। প্রত্যেকে সপ্তাহে ৫০ টাকা করে জমা দিতেন। ৫০ সপ্তাহে তাঁদের সমিতিতে জমা হয় ৫০ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে গত সোমবার তাঁরা একটি গরু কিনে এনে মাংস ভাগ করে নিয়েছেন। প্রত্যেকের ভাগে সাড়ে সাত কেজি করে মাংস পেয়েছেন। শুধু তাঁদের এলাকাতেই এ ধরনের অন্তত ২০টি ‘মাংস সমিতি’ রয়েছে।

সদর উপজেলার পোড়াবাড়ী ইউনিয়নের বড় বেলতা গ্রামের ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান জানান, সমিতি করলে নিজেরা গরু কিনে এনে ভালো মাংস পাওয়া যায়। তা ছাড়া খরচের চাপটাও অনেক কমে। টাঙ্গাইল সাধারণ গ্রন্থাগারের পিয়ন আবদুল মালেক জানান, ঈদে মাংস কিনতে অনেক টাকা লেগে যায়। তাঁদের মতো আয়ের লোকের তা সম্ভব হয় না। তাই তিনি কয়েক বছর ধরে তাঁদের গ্রামের একটি মাংস সমিতির সদস্য হয়েছেন। এতে মাসে ১০০ টাকা করে জমিয়ে প্রতি ঈদে পাঁচ-ছয় কেজি করে মাংস পাচ্ছেন।

টাঙ্গাইলের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) এস আকবর খান জানান, তাঁরা কয়েকজন আইনজীবী এ ধরনের একটি সমিতি গঠন করেছেন। এতে প্রতি ঈদে নিজেদের পছন্দের সুস্থ-সবল গরু কিনে এনে ভালো মাংস নিতে পারছেন। শহরের থানা পাড়া এলাকার গৃহবধূ মমতাজ বেগম জানান, ঈদের সামনে পরিবারের সবার জন্য নতুন জামাকাপড় কিনতে অনেক টাকা লেগে যায়। আর ঈদের দিন অতিথি আপ্যায়নে অনেক মাংস লাগে। সমিতি করলে অনায়াসে ১০-১২ কেজি মাংস পাওয়া যায়। সমিতিতে সাপ্তাহিক কিস্তি দেওয়ায় মাংসের খরচটাও গায়ে লাগে না।