জাহাজ কোম্পানি কার্যালয়ে ছাত্রলীগের হানা

চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ কোম্পানির কার্যালয়ে লাঠি ও হকিস্টিক নিয়ে হানার আগে ছাত্রলীগের মিছিল। ছবি: প্রথম আলো
চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ কোম্পানির কার্যালয়ে লাঠি ও হকিস্টিক নিয়ে হানার আগে ছাত্রলীগের মিছিল। ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রাম বন্দরে একটি জাহাজ কোম্পানির কার্যালয়ে লাঠি ও হকিস্টিক নিয়ে হানা দিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। বন্দরে আসা বিদেশি জাহাজের পুরোনো তেল সংগ্রহের কাজ আদায়ের জন্য তারা এ হামলা চালিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে আগ্রাবাদে এ ঘটনার সময় আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নগর ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে আগ্রাবাদে অবস্থিত জাহাজ কোম্পানির প্রতিনিধি গ্লোবলিংক অ্যাসোসিয়েটসের কার্যালয়ে হানা দেন। এ সময় হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন ভবনটির নিচে কয়েক শ লাঠি ও হকিস্টিক উঁচিয়ে স্লোগান দেন তাঁরা। এ ফাঁকে ৫০-৬০ জন নেতা–কর্মী চতুর্থ তলায় অবস্থিত গ্লোবলিংকের কার্যালয়ে জোর করে প্রবেশ করে কর্মকর্তাদের হুমকি দেন।

এ সময় একটি স্ট্যাম্পে সই দেওয়ার জন্য গ্লোবলিংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন আ ফ ম রহমতুল বারীকে চাপ দেওয়া হয়। আগামী দুই বছরে গ্লোবলিংকের যেসব জাহাজ আসবে সেগুলোতে মেসার্স সিদ্দিক এন্টারপ্রাইজকে কাজ দেওয়ার জন্য চাপ দেন জাকারিয়াসহ নেতা-কর্মীরা।
জাহাজ কোম্পানির কর্মকর্তারা তখন জানান, জাহাজের ক্যাপ্টেন কোনো কাজের জন্য চাহিদাপত্র না দিলে তাঁরা অনুমোদন দিতে পারেন না। এমন তথ্য জানালে নেতা-কর্মীরা কর্মকর্তাদের হুমকি দেন। এ সময় কয়েকজন কর্মকর্তার দিকে তেড়ে যান ছাত্রলীগের কর্মীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাকারিয়া দস্তগীর প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতা দাবিদার নওশাদ পিন্টু সেখানে দলবল নিয়ে কাজ আদায়ের জন্য যায়। আমি সেখানে যাইনি। নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরীর বন্দরের আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা মিছিল বের করি।’

জানা গেছে, গ্লোবলিংকের আওতায় চট্টগ্রাম বন্দরে যেসব জাহাজ আসে সেগুলোর কাজ পেত আওয়ামী লীগের নেতা নওশাদ পিন্টু। অনামিকা ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নামে তিনি এসব কাজ আদায় করতেন। নওশাদ পিন্টুকে কাজ না দিয়ে জাকারিয়া দস্তগীরের মনোনীত প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার জন্য আজ এই শো–ডাউন করেন নেতা-কর্মীরা।

জানতে চাইলে ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী নওশাদ পিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কোনো হুমকি দিয়ে কাজ আদায় করিনি। অনামিকা ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানটি আমাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান। জাকারিয়া দস্তগীরের নেতৃত্বে দুই শতাধিক কর্মী জোর করে কাজ আদায়ের জন্য ওই জাহাজ কোম্পানির কার্যালয়ে হানা দিয়েছিল।’

সিঙ্গাপুরের জাহাজ কোম্পানি সিমাটেক ও হাল—এই দুটি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধি আগ্রাবাদের গ্লোবলিংক অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড। সিঙ্গাপুরভিত্তিক ওই কোম্পানি দুটির কনটেইনার জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসার পর ক্যাপ্টেনের চাহিদা অনুযায়ী জাহাজের নানা ধরনের কাজের আদেশ দিয়ে থাকে স্থানীয় প্রতিনিধিকে। স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে গ্লোবলিংক বন্দরের লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যাদেশ দেওয়ার পরই বিনা পয়সায় পুরোনো তেল সংগ্রহ করে এসব প্রতিষ্ঠান। এরপর তারা বাইরে বিক্রি করে। এই কাজ আদায় করতে গিয়ে আজ এ ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গ্লোবলিংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আ ফ ম রহমতুল বারী কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

জানতে চাইলে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, জাহাজের পুরোনো তেল সংগ্রহের কাজ আদায়ের জন্য দুই পক্ষ জাহাজ কোম্পানির কার্যালয়ে যায়। খবর পাওয়ার পরপরই পুলিশ পাঠানো হয়। এ কারণে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক শেখ রাসেল আজ রাত নটায় প্রথম আলোকে জানান, ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।