আন্দোলন ক্ষমতার জন্য নয়, গণতন্ত্র-ভোটের অধিকারের জন্য

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, এক ব্যক্তির নির্দেশে সমস্ত দুর্নীতি থেকে সরকার দলীয় মন্ত্রী এমপিদের মুক্তি দিয়ে দুদক এখন দায়মুক্তি কমিশন হয়েছে। দুদকের নাম এখন দায়মুক্তি কমিশন। দেশে এখন এক ব্যক্তির শাসন চলছে। সংসদ এখন জনপ্রতিনিধিদের স্থান নয়, নিজেদের ঘর হয়ে গেছে। সামনের আন্দোলনে আমরা সামনে থাকব। তাই গুলি করে গদি রক্ষা হবে না। আমাদের আন্দোলন গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়।

আজ শনিবার বিকেলে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে ২০-দলীয় জোটের জনসভায় খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন।

এইচ টি ইমাম প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, ‌‌এইচ টি ইমাম আওয়ামী লীগের চিফ ইলেকশন কমিশনার ছিলেন। কিভাবে নির্বাচন ম্যানুপুলেট করেছেন, নিজেদের লোকদের বসিয়েছেন, ব্যালট বাক্সে ব্যালট পেপার ঢুকিয়েছেন। এত বড় সত্য কথা বলার পরও আওয়ামী লীগ ও এইচ টি ইমামের বিদায় নেওয়া উচিত। তাঁদের ক্ষমতায় থাকা কোন অধিকার নেই। এইচ টি ইমাম মোসতাকের কেবিনেটের লোক ছিলেন। যত রকমের শয়তানি ও কুবুদ্ধি তাঁর মাথায়। তাই এই ইমামের পেছনে নামাজ হবে না। এই ইমামের পেছনে না থাকলেই ভাল হয়।

রণাঙ্গণের সব মুক্তিযোদ্ধা আমাদের সঙ্গে আছেন
খালেদা জিয়া বলেন, জাসদের একজন নেতা বলেছেন আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল নয় এবং গণতন্ত্রের পক্ষের দল নয়। যারা গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল নয়, তাদেরকে দিয়ে দেশের কোন কল্যাণ হবে না। রণাঙ্গণের সব মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের সঙ্গে আছেন। তিনি বলেন, সারা দেশে উন্নয়ন নেই। উন্নয়নের নামে তারা টাকা বরাদ্দ করে লুটপাট করে নিজেদের পকেটে ভরে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। আজকে অর্থমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন অর্থনীতিতে স্থবিরতা এসেছে। স্থবিরতা কাটছে না। কর্মসংস্থান কমেছে প্রতি মাসে ১৯ শতাংশ। বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৮২ ভাগ। অর্থমন্ত্রী নিজেই নাখোশ। কারণ এ দলে (আওয়ামী লীগে) গণতন্ত্র নেই। এক ব্যক্তির শাসন ও শোষণ চলছে। অর্থমন্ত্রীরও বলার কোন ক্ষমতা নেই।

বিএনপি চেয়ারপারসন ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, আওয়ামী লীগের সময়ে কেউ নির্বাচনে যায়নি। কিন্তু তাদের আজ্ঞাবহ পা চাঁটা নির্বাচন কমিশন দুইদিন পর্যন্ত ভোটের হিসাব মিলাতে পারেনি। তিনদিন পর বলছে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে। অথচ ভোট পড়েছে মাত্র পাঁচ শতাংশ। সেখানে আওয়ামী লীগের লোকজনই ভোট কেন্দ্রে যায়নি, সেখানে এত ভোট কোথা থেকে এল। জনগণের পিটুনির ভয়েই তারা যায়নি। ভোটকেন্দ্রে কুকুর ও ছাগল শুয়ে আছে। ১৫৪ টি সিটে কোন নির্বাচন হয়নি। এরা অনির্বাচিত। এ পার্লামেন্ট সম্পূর্ণ অবৈধ। তারা বৈধ নয়। এই পার্লামেন্ট থেকে কোন আইন পাস করা তাদের ক্ষমতা নেই।

বিএনপির সময়ে পোশাকে দ্বিতীয় ছিল, এখন চতুর্থ
খালেদা জিয়া তাঁর সরকারের আমলের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেন, কুমিল্লায় বিএনপি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ করেছে। এখানকার রাস্তাঘাট উন্নয়ন করেছে। এ সরকারের আমলে রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ। একের পর এক পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের সময়ে পোশাক শিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়, আর এখন চতুর্থ অবস্থানে।

খালেদা জিয়া বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) নিজেদের মামলা বাদ দিয়ে আমাদের নামে নতুন নতুন মামলা দিচ্ছে। হাসিনার নামেও ১৫ টি মামলা ছিল। এগুলো প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তাঁর আমলে মিগ-২৯ কেনা হয়েছিল। সেটা ছিল পুরাতন। এটা জালিয়াতি করে কিনেছে। এ মামলাগুলোতে হাসিনার সাজা হতো। তিনি বলেন, মইনউদ্দিন, ফখরুদ্দিন আমার কাছে এসেছিল। আমি তাঁদের ডাকে সাড়া দেইনি। আমি বলেছিলাম, দেশ ছেড়ে যাব না। তাঁদের সঙ্গে কোন আঁতাত করিনি। আমি তাঁদের সঙ্গে রাজি না হওয়াতে তারা হাসিনাকে বসায়। তারা বিএনপিকে ৩৫ টি সিট দিয়েছে। এটা হতে পারে না।

ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কঠোর সমালোচনা করে থালেদা জিয়া বলেন, এ সব লীগদের কাজ হল জমি, বাড়ি দখল করা, টেন্ডারবাজি ও ভর্তি বাণিজ্য করা। পুলিশ এগুলো দেখে না। পুলিশ তাদের ধরে না। বিএনপির নেতাকর্মীদের ধরে। বিশ্বজিৎকে ছাত্রলীগের গুন্ডাবাহিনী মেরে ফেলেছে। হিন্দু পরিচয় দিয়েও সে রক্ষা পায়নি।

র‌্যাব এখন মানুষ খুন করা বাহিনী
র‌্যাব প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, র‌্যাব আমরাই প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। সেই র‌্যাব হয়ে গেছে এখন খুনী। গুম, খুন তাদের কাজ। নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় আওয়ামী লীগের গডফাদার, র‌্যাব ও পুলিশ জড়িত। আসল লোক এখনও পর্দার অন্তরালে। কর্ণেল জিয়াকে না ধরা পর্যন্ত র‌্যাবের গুপ্ত হত্যা বন্ধ করা যাবে না। অবিলম্বে র‌্যাবকে বাতিল করতে হবে। র‌্যাব এখন যাকে ইচ্ছে তাকে তুলে নিয়ে যায়। মোটা অংকের চাঁদা আদায় করে। র‌্যাব এখন মানুষ খুন করা বাহিনী। তারা এখন ভাড়া খাটে। জিয়াকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। র‌্যাব লাকসামের হিরু ও পারভেজকে তুলে নিয়ে গেছে। বাংলাদেশের বহু লোককে খুন করেছে। তিনি বলেন, এখন বনে জঙ্গলে, রাস্তার আশে পাশে নদী নালায় লাশ পাওয়া যায়। স্বাধীনতার পরে আওয়ামী লীগের আমলে এ সব হতো। এখন আবার আওয়ামী লীগের আমলেই হচ্ছে।

বিদ্যুৎ, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির চক্রান্ত প্রতিরোধ, গুম, খুন, গুপ্ত হত্যা বন্ধ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে গণসংযোগের অংশ হিসেবে এই জনসভা হয়। জনসভায় সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি বেগম রাবেয়া চৌধুরী। এতে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার, মওদুদ আহমেদ, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি অলি আহমেদ, জাতীয় পার্টির সভাপতি আন্দালিব রহমান পার্থ, কল্যাণ পার্টির সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু, সাবেক সাংসদ মনিরুল হক চৌধুরী, আমিন উর রশিদ ইয়াছিন, জাকারিয়া তাহের সুমন, আবদুল গফুর ভূঁইয়া, আনোয়ারুল আজিম, মো. ইউনুস, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শওকত মাহমুদসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা।

৩০ টি বাস ভাঙচুর করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা
এর আগে কুমিল্লার ১৬ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ নগরের টাউন হল মাঠে ভিড় জমায়। শত শত বাস ও ট্রাকে করে দলীয় নেতাকর্মীরা জনসভাস্থলে আসেন। জনসভায় আসার পথে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার বাগমারা এলাকায় নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের ৩০ টি বাস ভাঙচুর করা হয়।

জনস্রোত ঠেকাতে মোড়ে মোড়ে এলইডি টেলিভিশন
কুমিল্লা টাউন হল মাঠ জনসভার জন্য অপেক্ষাকৃত ছোট হওয়ায় বিএনপির উদ্যোগে নগরের বিভিন্ন স্থানে এলইডি টেলিভিশন লাগানো হয়। নগরের ঝাউতলা, ঈশ্বরপাঠশালা, মনোহরপুর সোনালী ব্যাংক এলাকা, নজরুল এভিনিউ, রাজগঞ্জ ও ঈদগাহ মোড় এলাকায় ওই টেলিভিশন স্থাপন করা হয়। এতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও জনসভায় আগত ব্যক্তিবর্গ খালেদা জিয়ার বক্তব্য শোনেন। স্মরণ কালের বৃহত্তর এ জনসভা উপলক্ষে নগরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। নগরের প্রধান সড়ক ছাপিয়ে অপ্রধান ও কানাগলিতেও জনজট ছিল।

জানতে চাইলে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুল হক সাক্কু বলেন, দিনের বেলায় প্রজেক্টরে ছবি ভালো দেখা যায় না। তাই এলইডি টেলিভিশন এনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্য দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।