পদ্মায় ভিটেমাটি হারিয়ে কাটছে মানবেতর দিন

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় পদ্মার ভাঙনের শিকার পাঁচ শতাধিক পরিবার জমিজমা ও ঘরবাড়ি হারিয়ে এখন নিঃস্ব। এসব পরিবারের সদস্যদের আশ্রয় হয়েছে অন্যের জমিতে। অনেকেই খোলা আকাশের নিচে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে।  

বন্যা মৌসুমে পদ্মার করাল গ্রাসে ভাঙনের মুখে পড়েছে আজিমনগর ইউনিয়নের একমাত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন এবং নবনির্মিত ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র।

ভাঙনকবলিত লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত এক মাসে হরিরামপুর উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নের আজিমনগর, ইব্রাহিমপুর, মনিপুর, রঘুদেবপুর, দৌলতপুর, সৈয়দপুর, পশ্চিচর, রঘুনাথপুর ও জালালদি গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এতে ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে পাঁচ শতাধিক পরিবার। আরও তিন শতাধিক পরিবার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আজিমনগর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জানা গেছে, হরিরামপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে দুর্গম চরাঞ্চল আজিমনগর ইউনিয়ন। চারদিকে নদী বেষ্টিত প্রায় ৪৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ ইউনিয়নটি ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে। বিগত ৪০ বছরে নয়টির মধ্যে চারটি ওয়ার্ডই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এই ইউনিয়নের আজিমনগর উচ্চবিদ্যালয়, আজিমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব আজিমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হারুকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন এবং নবনির্মিত ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভাঙনের কবলে রয়েছে।

গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, নদী ভাঙনের কবলে পড়ে এসব পরিবারের লোকজন উঁচু রাস্তা, বিদ্যালয়ের মাঠ ও অন্যের জায়গায় অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছে। ফসলি জমি ও বসতভিটে হারিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের।

ছয় বিঘা ফসলি জমি এবং এক বিঘার ওপর বসতবাড়ি ছিল আজিমনগর গ্রামের খলিল মোল্লার (৬০)। ছিল গোলাভরা ফসল। গত ১০ বছরে সব হারিয়ে এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে ঠাঁই হয়েছে রাস্তার ওপর। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘চোর-ডাহাত নিলেও কিছু রাইখ্যা যায়, কিন্তু নদী সবই কাইরা নেয়।’

হাটিঘাটা এলাকায় আশ্রয় নেওয়া সীমা আক্তার (৩০) বলেন, ‘সব হারাইয়্যা অন্যের জায়গায় মাথা গোঁজার ঠায় অইচে। দুই পোলা-ম্যায়া নিয়া এক বেলা খাইয়া-না খাইয়া কোনো রহম দিন পার করচি। কেউই খোঁজ নেয় না।’

আজিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. হান্নান মৃধা বলেন, উদ্বোধনের আগেই ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি হুমকির মধ্যে পড়েছে। সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া হলে ভাঙনের হাত থেকে এগুলো রক্ষা করা যেতে পারে। তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে তিনি সামান্য কিছু ত্রাণ হিসেবে চাল-ডালের ব্যবস্থা করলেও অর্ধাহারে-অনাহারে থাকা ইউনিয়নবাসীর জন্য সরকারিভাবে কোনো বরাদ্দ পাননি তিনি।

হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুন মিয়া বলেন, ইতিমধ্যে ইউপির চেয়ারম্যানকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে। এরপর তালিকা অনুযায়ী বরাদ্দ পাওয়ার পর তাদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হবে।