বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়েছে

দুর্নীতির বিশ্বজনীন ধারণা সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়েছে। বিশ্বের দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪তম। গত বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬তম।

জার্মানির বার্লিনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) বিশ্বজুড়ে দুর্নীতির যে ধারণা সূচক প্রকাশ করেছে, তাতে এ তথ্য উঠে এসেছে। আজ বুধবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সূচকে অন্তর্ভুক্ত ১৭৫টি দেশের মধ্যে ঊর্ধ্বক্রম (ভালো থেকে খারাপের দিকে) অনুযায়ী, বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৫তম। গত বছর এ তালিকায় বাংলাদেশ ১৩৬তম অবস্থানে ছিল। এ ক্ষেত্রে নয় ধাপ নিচে নেমেছে বাংলাদেশ। আর সূচকের ১০০ মানদণ্ডের মধ্যে বাংলাদেশের স্কোর বা নম্বর ২৫। গত বছর বাংলাদেশের নম্বর ছিল ২৭।

টিআইবি বলছে, দুর্নীতিবিরোধী অঙ্গীকার অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রত্যাশিত সক্রিয়তা ও কার্যকারিতা এবং দুর্নীতিতে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করার ঘাটতি, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় ব্যবসা প্রসার, ভূমি, নদী ও জলাশয় দখল, জাতীয় সংসদসহ জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা, স্বার্থের দ্বন্দ্ব, কালোটাকা সাদা করা ও বিদেশে অর্থ পাচারের সুযোগের কারণে দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের অবনতি ঘটেছে।

বাংলাদেশ দুর্নীতিতে ১৪তমবাংলাদেশে দুর্নীতিবিরোধী নানা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠান টিআইবি জানিয়েছে, দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত সময়কালের নানা তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে।

বৈশ্বিক অবস্থানের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয় আফগানিস্তানে। আর সবচেয়ে কম দুর্নীতি হয় ভুটানে।

টিআইয়ের   দুর্নীতির ধারণা সূচক প্রকাশ অনুষ্ঠানে এর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। আরও বক্তব্য দেন সংস্থাটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম হাফিজউদ্দিন খান ও এ টি এম শামসুল হুদা। ছবি: ফোকাস বাংলা
টিআইয়ের দুর্নীতির ধারণা সূচক প্রকাশ অনুষ্ঠানে এর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। আরও বক্তব্য দেন সংস্থাটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম হাফিজউদ্দিন খান ও এ টি এম শামসুল হুদা। ছবি: ফোকাস বাংলা

এই ধারণা সূচক অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ ডেনমার্ক। এর পরে রয়েছে যথাক্রমে নিউজিল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, সুইডেন, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ড। আর দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় যুগ্মভাবে শীর্ষে রয়েছে সোমালিয়া ও উত্তর কোরিয়া। এরপর আছে যথাক্রমে সুদান, আফগানিস্তান, দক্ষিণ সুদান ও ইরাক।

দুর্নীতির ধারণা সূচক প্রকাশ অনুষ্ঠানে এর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। বক্তব্য ​দেন সংস্থাটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম হাফিজউদ্দিন খান ও এটিএম শামসুল হুদা।

সুলতানা কামাল বলেন, ‘সূচকের মানদণ্ডে ১০০–এর মধ্যে বাংলাদেশের ২৫ পাওয়াটাই উদ্বেগজনক। গত কয়েক বছরে উন্নতির যে সুযোগ বা আভাস পেয়েছিলাম, সেখান থেকে নিচে নেমে আসাটাও উদ্বেগ তৈরি করে।’ তিনি আরও বলেন, এখন বাংলাদেশের সব ক্ষেত্রে নির্বাহী ক্ষমতার প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে। এ ধরনের হস্তক্ষেপ বা প্রাধান্য থাকলে সংসদসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। এসব বিষয় নিয়ে কথা বললে, দুর্নীতির বিচার চাইলে ক্ষমতার উচ্চপর্যায় থেকে আক্রোশ আসে। এতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার মানুষ বিচার চাওয়ার সাহস হারিয়ে ফেলে।

দুর্নীতির এ ধরনের প্রতিবেদন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে নানা সমালোচনার বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশের পর রাজনৈতিকভাবে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াটি নেতিবাচক হয়। কিন্তু পরবর্তীতে যখন দুর্নীতি প্রতিরোধে আইনি বা প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখন এ ধরনের প্রতিবেদন সহায়ক ভূমিকা হিসেবে কাজ করে। তাই রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াটিকে খুব বড় করে দেখি না। সরকার যদি এই ধরনের কার্যক্রম না চাইত, তাহলে আমরা তো কোনো কাজই করতে পারতাম না। সরকারের অনুমতি ছাড়া টিআইবি কোনো কাজ করে না।’