মধুপুরের মেয়রকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় ভাঙচুর, অবরোধ

নিজ দলের এক নেতার বাড়িতে গুলিবর্ষণের ঘটনায় মধুপুর পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরকার সহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে মধুপুর উপজেলা সদরে তাণ্ডব চালিয়েছেন মেয়রের সমর্থকেরা। গতকাল বৃহস্পতিবারের এ ঘটনায় তাঁরা একটি পুলিশভ্যান পুড়িয়ে দেন এবং রাস্তা অবরোধ করে ইউএনও ও উপজেলা চেয়ারম্যানের গাড়িসহ অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করেন।

স্থানীয় বিএনপির নেতারা জানান, টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে গত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ফকির মাহাবুব আনাম। তাঁর সমর্থক হলেন মেয়র সহিদুল। মধুপুর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক কানাডাপ্রবাসী ভুঁইয়া গোলাম মাহাবুব লতিফ আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে সম্প্রতি ঘোষণা দেওয়ায় উপজেলা বিএনপির কিছু নেতা-কর্মী তাঁর পক্ষে অবস্থান নেন। এ নিয়ে ফকির মাহাবুব আনামের সমর্থকদের সঙ্গে ভুঁইয়া গোলাম মাহাবুব লতিফের সমর্থকদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। উভয় পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষও হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত বুধবার রাত ১২টার দিকে (১৫ আগস্ট প্রথম প্রহর) খালেদা জিয়ার জন্মদিনের কেক কাটার জন্য মাহাবুবের সমর্থকেরা তাঁদের নিজেদের তৈরি কার্যালয়ে সমবেত হন। এ খবর পেয়ে সহিদুলের নেতৃত্বে ফকির মাহাবুব আনামের সমর্থকেরা তাঁদের ধাওয়া করেন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হলে গোলাবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইদ্রিস খান আহত হন। ভুঁইয়া গোলাম মাহাবুবের বড় ভাই ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আমজাদ হোসেন ভুঁইয়া জানান, হামলার সময় মেয়র সরকার সহিদুল তাঁর বাড়ি লক্ষ্য করে সাত-আট রাউন্ড গুলিবর্ষণ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে তাঁরা চলে যান। পুলিশ সেখান থেকে চার রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করে। ওই রাতেই আমজাদ হোসেন ভুঁইয়া বাদী হয়ে মধুপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ গতকাল ভোরে এই মামলায় পৌর মেয়র সরকার সহিদুলকে আটক করে। পরে স্থানীয় নেতাদের অনুরোধে পুলিশ সকাল নয়টার দিকে তাঁকে ছেড়ে দেয়। এই ঘটনার প্রায় দুই ঘণ্টা পর বেলা ১১টার দিকে সরকার সহিদকে মুচলেকা দেওয়ার কথা বলে থানায় নিয়ে এসে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

পুলিশ জানায়, সরকার সহিদ তাঁর লাইসেন্স করা অস্ত্র দিয়ে গুলিবর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন।

এদিকে সরকার সহিদকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় মধুপুরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর সমর্থকেরা থানা ক্যাম্পাসে জড়ো হতে থাকেন। তাঁরা থানার মোড়ে ট্রাক দিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন। এতে মধুপুর-টাঙ্গাইল, মধুপুর-ময়মনসিংহ ও মধুপুর-জামালপুর সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সরকার সহিদকে টাঙ্গাইলের আদালতে পাঠানোর জন্য গাড়িতে উঠালে তাঁর সমর্থকেরা থানা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে। অপরদিকে সহিদের সমর্থকেরা ইটপাটকেল ও লাঠিসোঁটা নিয়ে পুলিশকে তাড়া করেন। এ সময় তাঁরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যানের গাড়িসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন এবং পুলিশের একটি গাড়ি ও একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন।

মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে আটজন পুলিশ আহত হয়েছে।

মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নুরুল হুদা জানান, হাসপাতালে সাতজনের শরীর থেকে রাবার বুলেট অপসারণ করা হয়েছে।

 মধুপুর থানার ওসি মজিবর রহমান জানান, পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় গতকাল বিকেল পর্যন্ত ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ব্যাপারে গত রাতেই একটি মামলা হয়েছে।