সাংসদ এনামুলকেও দুদকের দায়মুক্তি

সাংসদ এনামুল হক
সাংসদ এনামুল হক

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে রাজশাহী-৪ আসনের সরকারদলীয় সাংসদ এনামুল হককে অব্যাহতি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ তদন্তের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। 
দুদক সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার এনামুলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগটি নথিভুক্ত করার অনুমোদন দেন চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান। একই সঙ্গে অভিযোগটি কর ফাঁকিসংক্রান্ত বিষয়ে হওয়ায় এনবিআরের অধিভুক্ত বলে মত দেন।
জানতে চাইলে দুদকের চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করে কমিশন অভিযোগটি নথিভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এনবিআরের অনুসন্ধানে মামলা করার মতো কিছু এলে দুদক বিষয়টি বিবেচনা করবে।
কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, এনামুল হকের বিষয়টিতে দুদকের কিছু করার নেই। অনুসন্ধান কর্মকর্তা ব্যক্তিগত সম্পদ আর প্রাতিষ্ঠানিক সম্পদ একসঙ্গে মিলিয়ে ফেলেছেন। কর ফাঁকির যে বিষয় আছে, সেটা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিষয়। এটা দুদকের তফসিলের ভেতরে পড়ে না। তাই এনামুল হককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
বিগত মহাজোট সরকারের সাত মন্ত্রী-সাংসদের বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক সম্পদ বৃদ্ধির অভিযোগ উঠলে দুদক চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি তা অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচনী হলফনামাকে ভিত্তি করে এই অনুসন্ধান শুরু হয়। এনামুল হকের বিরুদ্ধে আসা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় উপপরিচালক যতন কুমার রায়কে।
দীর্ঘ সাত মাস ধরে পরিচালিত তদন্তে যতন কুমার রায় এনামুলের ব্যক্তিগত, প্রাতিষ্ঠানিক সম্পদ অনুসন্ধান ও জিজ্ঞাসাবাদ করেন। অনুসন্ধান চলাকালে এনামুল হকের প্রতিষ্ঠান এনা প্রপার্টিজের এক কর্মকর্তা যতন কুমার রায়কে ‘হাওয়া করে দেওয়ার’ হুমকি দেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়ে ১০ সেপ্টেম্বর রমনা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন যতন কুমার রায়।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর কমিশনের কাছে অনুসন্ধান প্রতিবেদন জমা দেন তিনি। দুদক সূত্র জানায়, প্রতিবেদনে সাংসদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন ও কর ফাঁকির অভিযোগ আনা হয়। এনামুল হকের বিরুদ্ধে ২১৩ কোটি ৮০ লাখ টাকার সম্পদ গোপন এবং দুই কোটি ৮৮ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে মামলার সুপারিশ করেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা।
অনুসন্ধান কর্মকর্তার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর তিন মাসেরও বেশি সময় লেগেছে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে। কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. নাসিরউদ্দিন আহমেদ অনুসন্ধান কর্মকর্তার জমা দেওয়া প্রতিবেদনের সঙ্গে একমত হয়ে মামলা করার পক্ষে মত দেন। অন্যদিকে, কমিশনার (তদন্ত) মো. সাহাবুদ্দিন অভিযোগটি নথিভুক্ত করার (অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার) পক্ষে মত দেন।
এই দুই রকম মতামতের পর বিষয়টি ৩ নভেম্বর কমিশনের পূর্ণাঙ্গ বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। বৈঠকে বিষয়টি নথিভুক্ত করার অভিমত যথার্থ কি না, সে ব্যাপারে পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত হয়।
এক মাস পর ১ ডিসেম্বর কমিশনের আরেকটি বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। ওই বৈঠকে কমিশনার নাসিরউদ্দিন আহমেদ তাঁর অবস্থান থেকে সরে এসে পুনরায় অনুসন্ধানের পক্ষে মত দেন। অপর কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন তাঁর অবস্থানে অটল থাকেন।
দুদকের যেকোনো সিদ্ধান্ত চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনারসহ তিনজনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে নেওয়া হয়। দুই কমিশনারের পরস্পরবিরোধী মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি নাকি আবারও অনুসন্ধান হবে, তা পর্যালোচনা করে চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান অভিযোগটি নথিভুক্ত করার (অব্যাহতি) অনুমোদন দেন। ফলে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি পেলেন সরকারদলীয় সাংসদ এনামুল হক।
উল্লেখ্য, নবম জাতীয় সংসদের সাত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সাংসদের হলফনামা নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ৭০ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-সাংসদের হলফনামা ও বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া অস্বাভাবিক সম্পদের তথ্য থেকে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান, সরকারদলীয় সাংসদ আসলামুল হক, আবদুর রহমান বদি ও এনামুল হকের বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধানের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এঁদের মধ্যে আবদুল মান্নান খান, মাহবুবুর রহমান ও আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। হলফনামায় তথ্য দিতে ‘ভুল হয়েছে’ যুক্তি গ্রহণ করে আ ফ ম রুহুল হক ও আসলামুল হককে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় সংস্থাটি।