মতিঝিল-পল্টনে সমাবেশ চান না ব্যবসায়ীরা

হেফাজতে ইসলামের সমাবেশকে ঘিরে ঘটা তাণ্ডবের পর ঢাকার বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র মতিঝিল, পল্টন ও এর আশপাশ এলাকায় আর কোনো রাজনৈতিক সমাবেশ চান না ব্যবসায়ীরা। তাঁরা এসব এলাকায় রাজনৈতিক সমাবেশ নিষিদ্ধের দাবি জানাবেন সরকারের কাছে।

গত রোববার হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে মতিঝিল ও সংলগ্ন এলাকায় রাজনৈতিক সমাবেশ নিষিদ্ধের অনুরোধ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়ে সরকারের কাছে সুপারিশ করবে বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি।

জানতে চাইলে গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলগীর বলেন, মতিঝিল এলাকায় কোনো রাজনৈতিক সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেছেন, তাঁরা এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা এখনো পাননি।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, দেশের মানুষ হেফাজতের যে তাণ্ডব প্রত্যক্ষ করেছে, তারপর মতিঝিল-দিলকুশা বা সংলগ্ন এলাকায় রাজনৈতিক সমাবেশের অনুমতি না দেওয়াই ভালো।

তবে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেন, বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলকে জব্দ করার জন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মতিঝিল এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা সমীচীন হবে না।

রাজধানীতে রাস্তা আটকে রাজনৈতিক দলের সমাবেশ লেগেই আছে। বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের রাস্তাটিতে প্রতি শুক্রবার ধর্মভিত্তিক দলগুলোর কোনো না-কোনো কর্মসূচি থাকে। নয়াপল্টনে বিএনপি অফিসের সামনের রাস্তাটি দলের সভা-সমাবেশ এবং দলীয় কর্মীদের উপস্থিতির কারণে বেশির ভাগ সময়ই বন্ধ থাকে।

সর্বশেষ গত রোববার হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ থেকে যে তাণ্ডব চালানো হয়েছে, তা দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। তারা আইএফআইসি, সিটি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংকের এটিএম বুথে ভাঙচুর করেছে। তাদের ধ্বংসযজ্ঞে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রিমিয়ার ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, অগ্রণী, জনতা, ইবিএল, সাউথ-ইস্ট, উত্তরাসহ আরও কয়েকটি ব্যাংক।

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) সূত্র জানায়, তারা মতিঝিল, দিলকুশা ও বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সব ধরনের রাজনৈতিক সমাবেশ নিষিদ্ধের দাবি জানাবে।

এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাই না রাজধানীর বাণিজ্যিক কেন্দ্রে কোনো রাজনৈতিক সমাবেশ হোক। এসব এলাকায় যেকোনো ধরনের সমাবেশ যাতে নিষিদ্ধ করা হয়, সে জন্য সংগঠনের পরবর্তী বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারকে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানানো হবে।

বায়তুল মোকাররমের ব্যবসায়ী গ্রুপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল উদ্দিন মজুমদার বলেন, তাঁরা স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর কাছে বায়তুল মোকাররম এলাকায় যেকোনো ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে দু-এক দিনের মধ্যেই এফবিসিসিআইয়ে পাঠানো হবে বলে তিনি জানান।

মহাজোটভুক্ত ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাংসদ রাশেদ খান মেনন বলেন, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে মতিঝিল, দিলকুশা বা বায়তুল মোকাররম এলাকায় সমাবেশ না করতে দেওয়াই ভালো।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি এ বি এম আবুল কাসেম জানান, মতিঝিলে সভা-সমাবেশ না হওয়াই ভালো।