উদয়ী বামনরাঙা

শিকার ধরার জন্য ডালে বসে আছে বুনো মাছরাঙা। কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান থেকে গত মে মাসে তোলা ছবি l লেখক
শিকার ধরার জন্য ডালে বসে আছে বুনো মাছরাঙা। কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান থেকে গত মে মাসে তোলা ছবি l লেখক

বাংলাদেশে ১২ প্রজাতির মাছরাঙা আছে। যাদের মধ্যে উদয়ী বামনরাঙা (Oriental Dwarf Kingfisher) গ্রীষ্মকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনের ছড়ার আশপাশে বসবাস করে। ছড়া থেকে নিয়মিত মাছ ধরে ও ছড়ার খাড়া পাড়ে গর্ত করে বাসা বানায়। উদয়ী বামনরাঙা বিশ্বে বিপদগ্রস্ত পাখি হিসেবে পরিচিত।
এ বছরের মে মাসের এক ভোরে কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের রাম পাহাড়ের ছড়ায় পাখি দেখতে বের হই। সঙ্গে ছিলেন পাখি আলোকচিত্রী রোনাল্ড হালদার। তিনিই সেখানে নিয়ে গেলেন উদয়ী বামনরাঙা দেখাতে। আমরা ধীরে ধীরে ছড়ার ভেতর দিয়ে হাঁটছিলাম। প্রায় আধঘণ্টা হাঁটার পরই শুনতে পেলাম মাছরাঙা পাখির ডাক। কিন্তু তখনো নিশ্চিত ছিলাম না যে এটি কোনো মাছরাঙা। ডাকটি নীলকান মাছরাঙার মতোই মনে হয়েছিল। পাহাড়ি ছড়ার পথে কিছুদূর হাঁটার পরই একটি লতাজাতীয় গাছের দেখা পাই। লতায় ফুটেছে সুগন্ধি ফুল। সে ফুলের সৌরভ ছড়িয়ে পড়েছে। তখনই সোজা উড়ে এসে ছড়ার কাছের ঝোপের ডালে উড়ে বসল একটি ছোট মাছরাঙা পাখি। সেদিনই প্রথম উদয়ী বামনরাঙা দেখার সৌভাগ্য হলো। রোনাল্ড হালদারকে ধন্যবাদ দিতে দেরি করলাম না। মোটামুটি মিনিট দুয়েক সময় দিয়েছিল আমাদের। তারপর ছড়ার জলে ডাইভ দিয়ে মাছ ধরে উড়ে গেল অন্য কোথাও। পরে এ মাছরাঙাকে আরও কয়েকবার দেখেছি। পাখিটি সব সময় ছড়ার পথেই উড়ে চলে। পাহাড়ি ছড়া আঁকাবাঁকা হলেও পাখিটি দ্রুত পথ পরিবর্তন করতে পারে। ওড়ার সময় তীক্ষ্ণ কণ্ঠে ডাকে; চিচিচি... শব্দে।

উদয়ী বামনরাঙা আগুনরঙের মাছ শিকারি পাখি। এটি আমাদের দেশের সবচেয়ে ছোট মাছরাঙা। দেহ দৈর্ঘ্য মাত্র ১৩ সেন্টিমিটার। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা, মাথরা চাঁদি ও ঘাড় কমলা রঙের। পিঠ, কাঁধ, ডানা-ঢাকনি ও ডানার পালক নীলচে কালো। কোমর ও লেজ কমলা রঙের ও গলা সাদা। পেট কমলা হলুদ; চোখ গাঢ় লাল, ঠোঁট ও পায়ের পাতা লাল। ছেলে ও মেয়ে পাখির চেহারা অভিন্ন।

পার্বত্য চট্টগ্রামের কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান, মৌলভীবাজারের সাতছড়ি ও লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এবং আদমপুর বনে প্রতিবছরই এ পাখি দেখা যায়। বুনো মাছরাঙা পাতাঝরা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও চিরসবুজ বনের ছায়াময় ছড়া ও নদীতে বিচরণ করে। সাধারণত একা ঘুরে বেড়ায়। পানির কাছে এরা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকে এবং সুযোগ পেলেই জলে ডুব দিয়ে শিকার ধরে খায়। খাবার তালিকায় আছে ছোট মাছ, পোকামাকড়, কাঁকড়া ও শামুক। পানির ওপরে এবং কাছাকাছি গাছের ডালে এরা লুকিয়ে থাকতে পছন্দ করে। মানুষের উপস্থিতি টের পেলে দ্রুত ডানা চালিয়ে তাড়াতাড়ি ও সোজা উড়ে চলে। এপ্রিল-জুলাইয়ে ছড়া বা নদীর খাড়া পাড়ে গর্ত করে বাসা বানায়। ডিম সাদা, সংখ্যায় ৪-৭টি। ছেলে ও মেয়ে পাখি ডিমে তা দেয়। প্রায় ১৭ দিনে ডিম ফুটে ছানা বের হয়। ২০ দিন বয়স হলে ছানারা বাসা ছাড়ে।