তিন কমিটিতেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্ব

চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে। এই তিন সাংগঠনিক ইউনিটে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের একসঙ্গে দলীয় কর্মসূচিতে খুব কমই দেখা যায়। কোনো কর্মসূচিতে দুপক্ষ একসঙ্গে অংশ নিলেও প্রায়ই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। সংগঠনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত বলে জানা গেছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ জুলাই মহানগর ছাত্রদলের ১১ সদস্যের কমিটি ঘোষণার পর নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেনের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসে। ২২ জুলাই পদবঞ্চিত ব্যক্তিরা দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবন ও ১৫ আগস্ট শাহাদাতের গাড়িতে আগুন দেন। ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। আমীর খসরু ও আবদুল্লাহ আল নোমানের অনুসারীরা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে শাহাদাৎ এসব ঘটনার জন্য কেবল আমীর খসরুকে দায়ী করেন। শাহাদাৎ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রদল ও যুবদলের কমিটি কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু আমীর খসরু আমার ওপর দায় চাপাচ্ছেন। এতে সংগঠনের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হতে পারে। এসব বিরোধ, ভুল-বোঝাবুঝি মিটিয়ে ফেলা উচিত।’

জবাবে আমীর খসরু বলেন, ‘আমার সঙ্গে কারও দূরত্ব নেই। ছাত্রদল ও যুবদলের কমিটি কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয়েছে। কোনো সমস্যা হলে কেন্দ্র সমাধান করবে। এখানে আমার কী বলার আছে? তবে আমি দলীয় ঐক্য চাই। এতে সংগঠন মজবুত হয়।’

রাঙ্গুনিয়া ও মিরসরাই উপজেলা বিএনপির বিরোধ মেটানো নিয়ে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয় বলে তাঁদের অনুসারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। এ জন্য সাধারণ সম্পাদক আসলাম চৌধুরী সভাপতি গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে দায়ী করছেন। এই দুই নেতাকে একসঙ্গে দলীয় কর্মসূচিতে খুব কমই দেখা যায়।

 ২৭ আগস্ট জেলা বিএনপির কর্মিসভায় পাল্টাপাল্টি স্লোগান দেওয়া নিয়ে গিয়াসউদ্দিন ও আসলাম চৌধুরীর সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এ সময় গিয়াসউদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত উত্তর জেলার সহসভাপতি এস এম ফজলুল হকের সঙ্গে আসলাম চৌধুরীর কথা-কাটাকাটি হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে। অবশ্য গিয়াসউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি রাজনীতিকে রাজনীতির মাধ্যমে মূল্যায়ন করি। তাই সংগঠনের সব কর্মসূচিতে অংশ নিই। তৃণমূল নেতাদের নিয়ে কাজ করছি। ব্যবসায়িক কাজে ব্যস্ততার কারণে সাধারণ সম্পাদক সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে উপস্থিত হতে পারেন না। তবে তাঁর সঙ্গে আমার কোনো দূরত্ব নেই।’

আসলাম চৌধুরী বলেন, ‘গিয়াসউদ্দিন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদকও। দলীয় কাজে তাঁকে ঢাকায় বেশি থাকতে হয়। আমি চট্টগ্রামে থাকি। সংগঠনের সব কাজ নিজ হাতে করি। আমাদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই।’ তবে তিনি স্বীকার করেন, ‘রাঙ্গুনিয়ায় গিয়াসউদ্দিন ও তাঁর বড় ভাই সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। আমি বেশ কয়েকবার রাঙ্গুনিয়া এবং মিরসরাইয়ে দলের বিরোধ মেটানোর উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু সভাপতির আন্তরিকতার অভাবে কোথাও সফল হইনি।’

সভায় কথা-কাটাকাটি প্রসঙ্গে আসলাম চৌধুরী বলেন, ‘বক্তৃতাপর্ব চলার সময় ফজলুল হক দাঁড়িয়ে যান। আমি তাঁকে বসতে বলি। এ নিয়ে কিছু কথা-কাটাকাটি হয়।’

আগামী জাতীয় নির্বাচনে পটিয়ায় প্রার্থিতা নিয়ে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক গাজী শাহজাহানের দ্বন্দ্ব বেশ প্রকট হয়ে উঠেছে। তবে তারও আগে দক্ষিণ জেলা কমিটি ঘোষণার পর গাজী শাহজাহান ও সরওয়ার জামাল নিজাম সভাপতি জাফরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তখন থেকে জাফরুল ও গাজী শাহজাহানের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়।

গত শুক্রবার নগরের পতেঙ্গা এলাকার একটি ক্লাবে দক্ষিণ জেলা বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় জাফরুল ইসলাম ও গাজী শাহজাহানের অনুসারীদের মধ্যে বাগিবতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। এতে সভার কাজ ব্যাহত হয়।

দলীয় সূত্র জানায়, গাজী শাহজাহান ২০০১ সালে পটিয়া থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। ওই এলাকায় ধনাঢ্য একজন ব্যবসায়ীকে প্রার্থী করানোর চেষ্টা চলছে। এর পেছনে জাফরুল ইসলামের অনুসারীদের হাত থাকতে পারে বলে গাজী শাহজাহানের অনুসারীরা মনে করছেন।

গাজী শাহজাহান বলেন, ‘আমার এলাকায় একজন ব্যবসায়ীকে প্রার্থী করানোর চেষ্টা চলছে বলে শুনেছি। বিএনপি বড় সংগঠন, এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে আমার কোনো দ্বন্দ্ব নেই।’

বিষয়টি নিয়ে জাফরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর একজন অনুসারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গাজী শাহজাহান রাজনীতি বেশি বোঝেন। তাঁর কারণেই সংগঠনের বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে।’