'দেশ ধ্বংস করা রাজনীতি চাই না'

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকায় চেম্বার ভবনের সামনে গতকাল দুপুরে প্রতীকী অবস্থান ও মাববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন ব্যবসায়ীরা l ছবি: প্রথম আলো
চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকায় চেম্বার ভবনের সামনে গতকাল দুপুরে প্রতীকী অবস্থান ও মাববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন ব্যবসায়ীরা l ছবি: প্রথম আলো

‘যে রাজনীতি দেশের ব্যবসা ও অর্থনীতিকে ধ্বংস করে, সেই রাজনীতি আমরা চাই না’—গতকাল রোববার চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে চেম্বার ভবনের সামনে প্রতীকী অবস্থান ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে ব্যবসায়ীরা এ কথা বলেছেন। ‘সবার ওপরে দেশ, দেশ বাঁচাও অর্থনীতি বাঁচাও’ স্লোগানে জাতীয় পতাকা হাতে কর্মসূচিতে অংশ নেন ব্যবসায়ীরা।
টানা অবরোধ-হরতালসহ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা দেশে স্থিতিশীলতা এবং ব্যবসার নিরবচ্ছিন্ন পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে মাঠে নামার ঘোষণা দেন। গতকাল দুপুর ১২টা থেকে ১২টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের আহ্বানে চট্টগ্রাম চেম্বার এ কর্মসূচির আয়োজন করে। মানববন্ধনে শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম উইম্যান চেম্বার, বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোওয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশন, শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বারভিডা, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, দোকান মালিক সমিতিসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা ও সদস্যরা অংশ নেন।
মানববন্ধনে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা আর পণ্যবাহী গাড়িতে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া সুস্থ রাজনীতি নয়। দেশ ধ্বংস করে রাজনীতি হতে পারে না। ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান। অন্যথায় এক সপ্তাহের মধ্যে চট্টগ্রাম চেম্বারের নেতৃত্বে কঠোর আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেন তিনি।
এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক এম এ সালাম রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে বলেন, ‘আগে দেশ বাঁচান। দেশের অর্থনীতি বাঁচান। কারণ, দেশ বাঁচলেই আপনারা রাজনীতি করতে পারবেন।’
অভিন্ন দাবিতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারও পৃথকভাবে প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।

নাশকতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের ওয়াসা মোড় এলাকায় গতকাল বিকেলে মহানগর আওয়ামী লীগের মানববন্ধন l ছবি: প্রথম আলো
নাশকতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের ওয়াসা মোড় এলাকায় গতকাল বিকেলে মহানগর আওয়ামী লীগের মানববন্ধন l ছবি: প্রথম আলো

নগরে দিনভর মানববন্ধন: ব্যবসায়ীদের অবস্থান কর্মসূচি ছাড়াও পেট্রলবোমা হামলা ও নাশকতার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় মানববন্ধন করেছেন নাগরিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা। গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সর্বত্র এই কর্মসূচি পালিত হয়।
বিকেলে নগরের লালদীঘি মোড় থেকে আন্দরকিল্লা মোমিন রোড হয়ে নগরের জামালখান প্রেসক্লাব দুই কিলোমিটার দীর্ঘ মানববন্ধন করেছে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া লোকজন পেট্রলবোমায় আহত ব্যক্তিদের ছবি নিয়ে নৈরাজ্য বন্ধের দাবি জানান। আগুনে আর কোনো মানুষকে যাতে পুড়ে মরতে না হয়, মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়।
ওয়াসা মোড় থেকে ইস্পাহানী মোড় এক কিলোমিটার দীর্ঘ আরেকটি মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। গতকাল বিকেলে অনুষ্ঠিত ওই কর্মসূচিতে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরউদ্দিন অংশ নেন। ওয়াসার মোড়ের সমাবেশে তাঁরা বোমা হামলাকারীদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ার উচ্চারণ করেন।
কোতোয়ািল কেসি দে রোডে দুপুরে বাংলাদেশ জুয়েলার্স মালিক সমিতি মানববন্ধন করে। সেখানে ব্যবসায়ীরা দেশে শান্তি ও স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।
পাহাড়তলী থেকে হাটহাজারীর মদুনাঘাট পর্যন্ত কাপ্তাই সড়কের প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আরেকটি মানববন্ধন হয়। দীর্ঘ এই মানববন্ধনে স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সামাজিক সংগঠন, পরিবহনশ্রমিক, পোশাকশ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেিণ-পেশার লোকজন অংশ নেন। শিক্ষার্থীরা নিরাপদে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার দাবি-সংবলিত ব্যানার ও পোস্টার প্রদর্শন করে মানববন্ধনে।
রাঙামাটি: অবরোধ, হরতাল ও সহিংসতা বন্ধের দাবিতে রাঙামাটিতে ব্যবসায়ীরা মানববন্ধন করেছেন। কর্মসূচিতে সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ ফিরোজা বেগমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের উদ্যোগে শহরের রিজার্ভ বাজারে চেম্বারস ভবনের সামনে এ মানববন্ধন হয়।
লক্ষ্মীপুর: নাশকতার বিরুদ্ধে লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে ১৪ দলের নেতা-কর্মীরা। গতকাল বিকেলে ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়। বক্তারা বলেন, হরতাল-অবরোধের নামে মানুষ মেরে সরকার পতন সম্ভব নয়। ২০১৯ সালের আগে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।
খাগড়াছড়ি: সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, পেট্রলবোমা হামলা চালিয়ে সাধারণ মানুষকে হত্যার প্রতিবাদে গতকাল বিকেলে শহরে মানববন্ধন করেছে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন। মানববন্ধনে বক্তারা চলমান নৈরাজ্য প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

রাঙামাটিতে চেম্বার ভবনের সামনে গতকাল ব্যবসায়ীদের মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ অংশ নেন l ছবি: প্রথম আলো
রাঙামাটিতে চেম্বার ভবনের সামনে গতকাল ব্যবসায়ীদের মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ অংশ নেন l ছবি: প্রথম আলো

চকরিয়া ও পেকুয়া: এফবিসিসিআই ঘোষিত কর্মসূচির আওতায় কক্সবাজারের পেকুয়া আলহাজ কবির আহমদ চৌধুরী বাজারের ব্যবসায়ীরা ১৫ মিনিট প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। সভায় বক্তারা রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর করে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করে মানুষ বাঁচাতে এগিয়ে আসার জন্য সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানান।
নাশকতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে কক্সবাজারের চকরিয়া পৌর শহরের চিরিঙ্গা স্টেশনে গতকাল বিকেলে ১৪ দল মানববন্ধন করে। এ কর্মসূচিতে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা সংহতি প্রকাশ করেন। পরে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল করেন।
সীতাকুণ্ড: সীতাকুণ্ডের পুরাতন ঢাকা ট্রাঙ্করোড (ডিটি) সড়কে নাশকতার বিরুদ্ধে মানববন্ধন হয়েছে। ১৪ দলের নেতা-কর্মীদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে অন্য রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
রামগতি ও কমলনগর: লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগরে গতকাল বিকেলে ১৪ দলের নেতা-কর্মীরা মানববন্ধন করেছেন। মানববন্ধনে বক্তারা বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধ-হরতালে অগ্নিসংযোগ, পেট্রলবোমা হামলা, নাশকতা ও সহিংসতা বন্ধ করার দাবি জানান।
নোয়াখালী: পেট্রলবোমা মেরে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে নোয়াখালীতে গতকাল একাধিক রাজনৈতিক দল এবং ব্যবসায়ী সংগঠন মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে। সকাল সাড়ে দশটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত পৃথকভাবে এসব কর্মসূচি পালিত হয়।
ফেনী: ‘সংঘাতে ঝরে প্রাণ, সমঝোতায় সমাধান’, ‘নাশকতা রুখো, মানুষ বাঁচাও, দেশ বাঁচাও’—এমন সব স্লোগানে গতকাল দুপুরের ফেনীতে পৃথকভাবে মানববন্ধন করেছেন ব্যবসায়ীরা। শহরের ট্রাঙ্ক রোডের শহীদ মিনার চত্বরে মানববন্ধন করেছে ফেনী চেম্বার অব কমার্স ও শহর ব্যবসায়ী সমিতি। ফেনী শহর ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি কলেজ রোডে এবং মহিপালে ফল ব্যবসায়ী সমিতি একই দাবিতে পৃথক কর্মসূচি পালন করেছে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছে সংশ্লিষ্ট এলাকার আঞ্চলিক কার্যালয় এবং প্রতিনিধিরা]