ভাষা ব্যবহারে অসামঞ্জস্য ঘোচানোর উদ্যোগ

মোদের গরব মোদের আশা: ২১ ফেব্রুয়ারি
মোদের গরব মোদের আশা: ২১ ফেব্রুয়ারি

সরকারি কাজে প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যবহার এবং ভাষার সমরূপতা বজায় রেখে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে ভাষার অসামঞ্জস্য ঘোচানোর উদ্যোগ নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ের বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন কোষ (বাবাকো) বানানের নিয়ম, প্রশাসনিক পরিভাষা, সচিবালয়ের নির্দেশ, বিভিন্ন আইনের বাংলা অনুবাদসহ বেশ কিছু প্রকাশনা ও পর্যালোচনার কাজ করছে। সরকারি কাজে শুদ্ধ বানান ও প্রমিত ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, তাও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
সরকারি কাজে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে ১৯৮৭ সালের ৮ মার্চ ‘বাংলা ভাষা প্রচলন আইন’ জারি করা হয়। এ আইনের আওতায় বাবাকো ধাপে ধাপে বিদ্যমান আইন ও বিধিমালার বাংলা অনুবাদ, প্রজ্ঞাপন, বিভিন্ন সরকারি ফরমের অনুবাদ, বিদেশের সঙ্গে বিভিন্ন চুক্তির বাংলা অনুলিপি প্রস্তুত করা এবং প্রশাসনিক পরিভাষার বই প্রকাশ করছে।
বাবাকো সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ১২টি আইনসহ মোট ৩৪টি আইনের বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। প্রতি মাসে বাবাকোর অন্তত চারটি আইনের অনুবাদ প্রকাশ করার লক্ষ্য নির্ধারিত রয়েছে। তবে সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না।
এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, আইন অনুবাদের কাজ সময়সাপেক্ষ। বেশ কয়েকটি ধাপে এটি সম্পন্ন হয়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় তাদের আইন অনুবাদের জন্য বাবাকোতে পাঠানোর পর অনুবাদক এর ভাষান্তর করেন। এরপর বিশেষজ্ঞরা ভাষাগত দিক পরীক্ষা করেন। পরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অনুবাদটি দেখে মতামত দেয়। এসব পর্যায় পার হতেই সময় লেগে যায়। আইনের অনুবাদ ছাড়াও অন্য ধরনের প্রকাশনা ও অনুবাদ করতে হয়। উপরন্তু বাবাকোতে জনবলেরও ঘাটতি রয়েছে।
সরকারি কাজে বাংলা ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাবাকোর গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে রয়েছে প্রশাসনিক পরিভাষা প্রকাশ। ১৯৮৭ সালে প্রথম প্রশাসনিক পরিভাষা বইটি প্রকাশ করা হয়। এখন এটির নতুন সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে আড়াই হাজারের বেশি শব্দ নিয়ে। বইটি ব্যবহারিক কাজের ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর। বইটির তিনটি সংস্করণ হয়েছে। শিগগিরই এর পকেট সংস্করণ প্রকাশিত হবে।
বাবাকোর আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনার মধ্যে রয়েছে গত বছর প্রকাশিত সচিবালয়ের নির্দেশমালা-২০১৪ এবং এ বছর ২৫ জানুয়ারি প্রকাশিত সরকারি কাজে ব্যবহারিক বাংলা। প্রশাসনের উচ্চস্তর থেকে মাঠপর্যায় পর্যন্ত প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলায় দিকনির্দেশনা রয়েছে প্রথম বইটিতে। বইটি অনুসরণের জন্য সারা দেশে জেলা প্রশাসন পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে।
অন্য বইটি প্রমিত বাংলা ব্যবহারসংক্রান্ত। বর্তমানে সরকারি পর্যায়ে প্রস্তাব উপস্থাপন, নোট, টীকা, সারসংক্ষেপ লেখাসহ সব কাজই বাংলায় সম্পন্ন হচ্ছে। কিন্তু বানান ও ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক অসামঞ্জস্য রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে ব্যবহারিক কাজে ভাষার এসব অসামঞ্জস্য দূর করে প্রমিত রীতি ব্যবহারের নির্দেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি কাজে বাংলা একাডেমির প্রমিত বানানরীতি অনুসরণ করার জন্য সরকারি কাজে ব্যবহারিক বাংলা নামের নির্দেশিকামূলক বই প্রকাশ করা হয়েছে। বইটি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী পর্যায়ে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে। শিগগিরই এ বইটিরও পকেট সংস্করণ প্রকাশ করা হবে।
প্রশাসনিক কাজে বাংলা ব্যবহার সম্পর্কে জনপ্রশাসনসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী জানান, বিদেশে পত্রযোগাযোগ এবং এমন কিছু অনিবার্য ক্ষেত্র ছাড়া সরকারি সব রকম কাজে এখন বাংলা ভাষা ব্যবহৃত হচ্ছে। সব সরকারি দপ্তরে ভাষা প্রমিতকরণের কাজ চলছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের চিঠিপত্রসহ কার্যক্রমের বিবরণাদি, প্রস্তাবনা—এসব শুদ্ধ বানান ও প্রমিত ভাষায় লেখা হচ্ছে কি না, তা গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। সরকারি কাজের সুবিধার জন্য বাবাকো থেকে বানানের নিয়ম ও প্রয়োজনীয় শব্দের সঠিক বানানের তালিকা নিয়ে বই প্রকাশ করা হয়েছে।