আ.লীগ নেতার দোকানে প্রতি ওভারে জুয়া

গত বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ১০টা। কুলিয়ারচর-বাজিতপুর সড়কের কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার গাজিরচর এলাকায় গাজিরচর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেনের চায়ের দোকানে বসে প্রায় ৪০ জন শিশু-কিশোর টেলিভিশনে ক্রিকেট খেলা দেখছে।
বাংলাদেশ বনাম স্কটল্যান্ডের খেলায় বাংলাদেশ তখন ব্যাট করছিল। ক্রিজে তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এ সময় এক তরুণ বলে উঠল, ‘এই ওভারে একটি বাউন্ডারি হবে।’
সঙ্গে সঙ্গে বেশ কয়েকজন শিশু-কিশোর টাকার বিভিন্ন অঙ্ক উল্লেখ করে পক্ষে-বিপক্ষে আওয়াজ তুলল। ওভার শেষ হওয়া মাত্র হয়ে যায় লেনদেন। সকাল সোয়া ১০টা থেকে বেলা ১১টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত ওই দোকানে অবস্থান করে দেখা গেছে, আমির হোসেনের তত্ত্বাবধায়নে রান, উইকেট, বাউন্ডারি, ছক্কার ওপরে চলছে জুয়া।
টাকা লেনদেন হওয়ার কথা স্বীকার করে আমির হোসেন বলেন, বাংলাদেশের খেলা হলে হয়। অন্য দেশের বেলায় হয় না। ১০-২০ টাকার খেলা জুয়া নয় দাবি করে তিনি বলেন, এমন কিছু সারা দেশেই হয়।
লেনদেনের সময় বাজিতপুর হাফেজ আবদুর রাজ্জাক পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র মফিজুর রহমান ওরফে রোকন, মো. অপু ও অষ্টম শ্রেণির রিফাত মিয়ার সঙ্গে কথা হয়। খেলায় টাকা কেন, জানতে চাইলে তারা বিব্রতবোধ করে। পরে জানায়, তারা জুয়া খেলছে না, আনন্দ করার জন্য টাকা বাজি ধরছে।
জুয়ায় ১০ টাকা জেতার পর গাজিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র মো. জয়কে এ বিষয়ে প্রশ্ন করতেই কোনো উত্তর না দিয়ে সে দৌড়ে চলে যায়। একই বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির সৌরভ, চতুর্থ শ্রেণির ক্লিনটন ও পঞ্চম শ্রেণির জাকির হাসান জানায়, সবাই খেলে এ কারণে তারাও মাঝেমধ্যে খেলা দেখতে এসে পাঁচ-দশ টাকা বাজি ধরে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, খেলা হলেই স্কুলে না গিয়ে কিছু টাকা হাতে নিয়ে দোকানে এসে জুয়ায় বসে যাচ্ছে এখানকার অনেক শিশু-কিশোর। বিষয়টি নিয়ে এলাকার অনেকে উদ্বিগ্ন হলেও আমির হোসেন প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
লেনদেন থেকে ভাগ পান কি না, জানতে চাইলে খেপে যান আমির। তিনি বলেন, ‘আমির অন্যায় করে না।’
আপনার সামনে শিশু-কিশোরেরা টাকা লেনদেন করছে আর আপনি দেখেও কিছু বলছেন না, এটি অন্যায় কি না, এমন প্রশ্নে প্রথমে তিনি বলেন, বাংলাদেশের খেলা হলে এমন কিছু হবেই। তবে পরে দাবি করেন, যারা খেলে তারা কেউ ছাত্র নয়, দর্শক। গতকাল শুক্রবারের খেলায় যারা লেনদেন করেছে তাদের তিনি বের করে দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাজিতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত কুমার সাহা জানান, তিনি বিষয়টি দেখবেন।